চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার ১৪ নম্বর গ্যারেজসংলগ্ন একটি কলোনিতে জমি দখলের আশঙ্কায় ভয়ে রাত কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা। প্রায় এক মাস ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জোরপূর্বক জায়গাটি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। মব ঠেকাতে ও হামলার আতঙ্কে নারীরা রাতভর লাঠি হাতে পাহারা দিচ্ছে—এমন একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা দ্রুত ভাইরাল হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, একাধিকবার রাতের আঁধারে দখলকারীরা সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে। আদালতের রায় মালিকের পক্ষে থাকা সত্ত্বেও তারা দখলচেষ্টা থেকে সরে আসছে না।
সম্প্রতি এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন নারী রাতভর বাসার ফটকে লাঠি হাতে পাহারা দিচ্ছেন। ভিডিওটি জনপ্রিয় গণমাধ্যেম ঢাকা পোস্টসহ বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে গুরুত্বের সহিত প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসে।
সংঘবদ্ধভাবে দখলচেষ্টার অভিযোগ:
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাহবুব নামের একজন ব্যক্তি কিছু সন্ত্রাসী ভাড়া করে জমিটি দখলের পরিকল্পনা করছেন। তিনি একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি তাঁদের। কয়েক দিন আগে রাতে প্রায় ২০০ জনের একটি দল কলোনির কাছাকাছি অবস্থান নেয়। তবে পুলিশ আসার খবর পেয়ে তারা সরে যায়। এক নারী বাসিন্দা বলেন, ‘রাতে দখলবাজরা শত শত লোক নিয়ে মহড়া দেয়। আমরা ঘর থেকে বের হই না। আমরা নারীরা লাঠি হাতে পাহারা দিচ্ছি। এমন পরিস্থিতি আগে কখনো দেখিনি।’
আদালতের রায় মালিকের পক্ষে:
জমির মালিক আবুল কাশেম জানান, জায়গাটি তিনি নিয়ম মেনেই কিনেছেন এবং আদালতের রায়ও তাঁর পক্ষে। তবে তারপরও জোরপূর্বক জমি দখলের চেষ্টা চলছে। আবুল কাশেম বলেন, ‘মাহবুব নামের এক লোক সন্ত্রাসীদের নিয়ে বারবার হামলার হুমকি দিচ্ছে। আমি সিএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, হামলার চেষ্টা চালানো ছাড়াও ভাড়াটিয়াদের টাকা দিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে।
টাকা দিয়ে ভাড়াটিয়াকে তাড়ানোর চেষ্টা:
অনুসন্ধানে পাওয়া একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, আজম ও ইলিয়াস নামের দুই ব্যক্তি এক ভাড়াটিয়াকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে এলাকা ছেড়ে দিতে বলেন। সেই ভাড়াটিয়া এখন আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছেন। এ ছাড়া স্থানীয় এক বিএনপি নেতার কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপেও দখলচেষ্টার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের।
পুলিশের বক্তব্য:
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উত্তর বিভাগের উপকমিশনার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে আছে। স্থানীয় থানাকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।’ তবে বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস পেলেও কার্যকর ব্যবস্থা এখনো নেওয়া হয়নি।
গণমাধ্যমে খবর, তবু আশ্বস্ত নন এলাকাবাসী:
চান্দগাঁওয়ের এই ঘটনা নিয়ে এরই মধ্যে ঢাকা পোস্ট, যায়যায়দিন, দৈনিক আজাদী, বাংলাধারা, সময়ের কাগজ, আইপিটিভি সিএইচডি ও সময়ের নিউজসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি এখনো বদলায়নি বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। তাঁদের মতে, “বিষয়টি এখন শুধু প্রশাসনের নজরে থাকলেই চলবে না, সরেজমিনে তদারকি ও আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”