31.2 C
Chittagong
শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদচট্টগ্রামহালদার রেণুর কেজি দেড় লাখ!

প্রাকৃতিক প্রজননের উৎসব, প্রত্যাশা সাড়ে তিন কোটি টাকার বেচাবিক্রির

হালদার রেণুর কেজি দেড় লাখ!

বিশেষ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদী আবারও উপহার দিয়েছে দেশের সবচেয়ে দামী ও প্রাণবৈচিত্র্যসম্পন্ন সম্পদ—রুইজাতীয় মাছের রেণু। এবার প্রতি কেজি রেণুর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা দেশের মৎস্যবাজারে নজিরবিহীন।

রেণু বিক্রি শুরু হয়েছে সোমবার থেকে। শুরুতেই বাজারে সাড়ে তিন কোটি টাকার লেনদেনের আশা করছেন ডিম সংগ্রাহক ও রেণু উৎপাদকরা।

রেণু সংগ্রহ: এক জীবন্ত ঐতিহ্য

গত ২৬ মে দিবাগত রাতে এবং ২৯ মে সকাল ১১টার দিকে মা মাছ ডিম ছেড়ে দেয় হালদার অন্তত ১৪টি পয়েন্টে।
অংকুরি ঘোনা থেকে কর্ণফুলী মোহনা পর্যন্ত নদীর বিস্তৃত অংশজুড়ে ছিল এই প্রজনন উৎসব। ডিম সংগ্রহ করেন ৫৫০ জনের বেশি সংগ্রাহক, আড়াই শতাধিক নৌকা ব্যবহার করে।

মোট ১৪ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়, যার থেকে রেণু উৎপাদন চলছে সরকারি ৪টি, বেসরকারি ১২টি হ্যাচারি ও প্রায় ৬০টি মাটির কুয়ায়।

গবেষণা ও হিসাব বলছে: বিপুল সম্ভাবনা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্র জানায়—
৪০ বালতি ডিম থেকে ১ কেজি রেণু উৎপাদিত হয়। সেই হিসেবে ৮,৩৪৯ বালতি ডিমে প্রায় ২০৮ কেজি রেণু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যার বাজারমূল্য দাঁড়ায় ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা।

তবে কিছু বেসরকারি হ্যাচারিতে উৎপাদন হার আরও বেশি হওয়ায় বাস্তবে এই সংখ্যা সাড়ে তিন কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

 চ্যালেঞ্জও কম নয়: বৃষ্টি ও যাতায়াত সংকট

বৃষ্টির কারণে হাটহাজারী ও রাউজানের অনেক রেণু উৎপাদন কেন্দ্রে যাতায়াতের রাস্তাগুলো বন্যা ও ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রভাব পড়েছে সরবরাহ ও পরিবহনে।
ডিম সংগ্রাহক কামাল সওদাগর বলেন, “চাহিদা অনেক, কিন্তু বৃষ্টির কারণে ক্রেতাদের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।”

কৃত্রিম রেণু চক্র সক্রিয়, সতর্ক থাকার আহ্বান

একটি অসাধু চক্র কৃত্রিম রেণুকে ‘হালদার রেণু’ নামে বাজারজাত করতে সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ ডিম সংগ্রাহকদের। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “এই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে হালদার সুনাম নষ্ট হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন খাঁটি রেণু উৎপাদকরা।”

ভবিষ্যতের ভাবনা: জাতীয় সম্পদ হিসেবে সুরক্ষা প্রয়োজন

হালদা নদী শুধু একটি নদী নয়—এটি প্রাকৃতিক প্রজনন ও জাতির সম্পদের উৎস। প্রতিবছর এই নদী ঘিরে যে উৎসব, তা শুধু মৎস্যজীবী নয়, একটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক চক্রের অংশ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন,
“রেণু উৎপাদন কেবল অর্থনীতিই নয়, এটি একটি ঐতিহ্য। এর মান বজায় রাখতে হলে কৃত্রিম রেণু বন্ধ ও পরিবেশ রক্ষায় সরকারি নজরদারি আরও বাড়াতে হবে।”

প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও ব্যবহারযোগ্য করে তোলা একটি দেশের প্রজ্ঞার পরিচয়। হালদা সেই প্রজ্ঞার প্রতীক। তবে সঠিক পরিকল্পনা, নজরদারি এবং চাঁদাবাজ-জালিয়াত চক্রকে রুখতে না পারলে এই ঐতিহ্য ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে।