28.3 C
Chittagong
শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদআইন আদালত"বীর" থেকে "সহযোগী": বঙ্গবন্ধুসহ শীর্ষ নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল!

জামুকার নতুন অধ্যাদেশে চার শতাধিক নেতার নাম বাদ, শুরু হয়েছে বিতর্কের ঝড়

“বীর” থেকে “সহযোগী”: বঙ্গবন্ধুসহ শীর্ষ নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল!

সুসংবাদ ডেস্ক

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক চরম বিতর্ক উসকে দিয়ে, সদ্য জারি হওয়া এক অধ্যাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনৈতিক নেতাকে বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) প্রণীত এই অধ্যাদেশে তাঁদের পরিচয় বদলে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই অধ্যাদেশ জারির পরই সামাজিক, রাজনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের মধ্যে চরম সমালোচনা ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।
বিরোধীদের প্রশ্ন—“যাঁরা যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ করেছেন, রাষ্ট্র গঠন করেছেন, তাঁরা কি তবে মুক্তিযোদ্ধা নন?”

অধ্যাদেশে কী আছে?

মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ থেকে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল অধ্যাদেশ’ জারি হয়। এতে বলা হয়:

  • বঙ্গবন্ধু ও মুজিবনগর সরকারের এমএনএ/এমপিএরা বীর মুক্তিযোদ্ধা নন, বরং “মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী”।

  • স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী-সাংবাদিক, প্রবাসে জনমত গঠনে নিয়োজিত পেশাজীবী, মুজিবনগর সরকারের অধীন কর্মকর্তা, এমনকি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলও আর বীর মুক্তিযোদ্ধা নন।

ফিরে দেখা: যাঁরা বাদ

২০২২ সালের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন অনুযায়ী, এসব শ্রেণিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার সেসব ধারা পরিবর্তন করে ‘সহযোগী’ তকমা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, আইনিভাবে তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আর গণ্য হবেন না।

মুক্তিযোদ্ধা মানেই কি অস্ত্রধারী যোদ্ধা?

নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে,

“যাঁরা ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরাসরি পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন বা ভারতের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন—তাঁরাই কেবল বীর মুক্তিযোদ্ধা।”

তাহলে যারা যুদ্ধ পরিকল্পনা করেছেন? কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন? আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বাধীনতার দাবি প্রতিষ্ঠা করেছেন?
তাঁদের ভূমিকা কি ইতিহাসের বাইরে ঠেলে দেওয়া হলো?

মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের মত

ড. সারওয়ার আলম, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, বলেন:
“মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি—সব কিছুই বঙ্গবন্ধুর নামে ও নির্দেশনায় হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যদি মুক্তিযোদ্ধা না হন, তাহলে যুদ্ধের রাজনীতি কোথা থেকে শুরু হলো?”

রাজনৈতিক বিতর্কে বিভক্ত দেশ

অনেকে মনে করছেন, এ অধ্যাদেশ রাজনৈতিক প্রভাবিত ও ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা।
অন্যদিকে সরকারপন্থী কিছু মহল বলছে, “যুদ্ধ মানেই অস্ত্র হাতে যুদ্ধ। নীতিনির্ধারকরা সম্মানিত হবেন, তবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নয়।

সমালোচনার মুখে সরকার

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনায় খসড়ায় দ্বিতীয় দফায় পরিবর্তন এসেছে। প্রাথমিক খসড়ায় যারা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ ছিলেন, শেষ অধ্যাদেশে তাঁদের পরিচয় বদলে দেওয়া হয়েছে।একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে আইনি মোড়কে দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগ উঠছে নানা মহল থেকে।

 তাহলে কী প্রশ্ন উঠছে?

  • বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধা না হলে তাঁর নামে নামকরণ হওয়া ‘বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস’, ‘বীর শ্রেষ্ঠ শেখ মুজিব’ খেতাব কীভাবে টিকে থাকবে?

  • স্বাধীন বাংলা বেতারের ভূমিকা কি ঐতিহাসিকভাবে মূল্যহীন হয়ে গেল?

  • প্রবাসে জনমত গঠনে নিয়োজিত নেতারা কি শুধুই সহায়ক ছিলেন?

 সময়ের দর্পণে

এই অধ্যাদেশ শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়—এটি ইতিহাসের গভীরে গিয়ে জাতির আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন তোলে।
‘মুক্তিযুদ্ধ’ মানে কি কেবল বন্দুক হাতে যুদ্ধ? নাকি নেতৃত্ব, কূটনীতি, এবং সাংস্কৃতিক সংগ্রামও যুদ্ধের সমান অংশ?

 শেষ কথা

বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামটি মুক্তিযুদ্ধের সমার্থক। তাঁর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যায় না, তাঁর অবদানকেও আইনের খুঁটিনাটি দিয়ে আলাদা করা যায় না।
অধ্যাদেশ হয়তো শ্রেণিবিন্যাস করতে পারে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারীরা ‘সহযোগী’ ছিলেন—এই দাবি ইতিহাস মানবে কি?