চট্টগ্রাম মহানগরীর অধিকাংশ নিচু এলাকা ভারি বর্ষণের পানিতে তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো সড়কে হাঁটুপানি উঠেছে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার জলাবদ্ধতায় যানবাহন চলাচলও ব্যাহত হয়েছে। পরিবহণের অভাবে পানি মাড়িয়ে অনেকে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দৈনন্দিন কাজে বের হওয়া লোকজনকে পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে অলিগলি, মূল সড়ক। পানি ঢুকেছে বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। কোথাও কোমর সমান আবার কোথাও হাঁটুপানি মাড়িয়ে কাকভেজা শরীরে কর্মজীবীরা সকালে গেছেন কর্মস্থলে। তবে যানবাহন সংকটে রিকশা-সিএনজি অটোরিকশায় তাদের পকেট খসেছে।এদিকে, ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে- বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার রাত থেকে থেমে থেকে ভারি বর্ষণ হতে থাকে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হওয়ায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা মাঝারি থেকে ভারি কিংবা অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের জন্য তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত এবং নদীবন্দরের জন্য এক নম্বর নৌ সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে।
বৃষ্টিতে আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর, জিইসি মোড়, ওয়াসা মোড়, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়ার ডিসি রোড, পশ্চিম খুলশি, রিয়াজউদ্দিন বাজার তিন পুলের মাথাসহ বিভিন্ন এলাকা হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে। চকবাজারের কাঁচাবাজার থেকে ধনির পুল পর্যন্ত, পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের সামনে কোমর পরিমাণ পানিতে তলিয়ে গেছে। পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের সামনে কোমরপানি থাকায় অনেক সেবাপ্রার্থী অফিসে ঢুকতে পারেনি। সড়কে পানি প্রবাহিত হওয়ায় আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে যানবাহন চলাচলের চেষ্টা করে। কিন্তু ফ্লাইওভারের দুই প্রান্ত বহদ্দারহাট ও লালখানবাজারে যানজটে শত শত গাড়ি আটকে যায়।
এ সময় নগরীতে গণপরিবহণ সংকটও দেখা দেয়। বহদ্দারহাট ও মুরাদপুর এলাকায় পানি ডিঙিয়ে হেঁটে অনেককে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। পানি এড়াতে অনেকে আবার ফ্লাইওভারে উঠে হেঁটে চলাচল করেন। গণপরিবহণের অভাবে যাতায়াতের প্রধান অবলম্বন হয়ে ওঠে রিকশা। সুযোগ বুঝে তিন-চারগুণ বেশি ভাড়া নিয়েছেন রিকশা চালকরা।
বাকলিয়ার ডিসি রোডের বাসিন্দা সারোয়ার কামাল জানান, ‘বাকলিয়ার বেশিরভাগ এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে। বাসা-বাড়ি দোকানপাটে পানি ঢুকেছে। অনেকে বাসা থেকে বের হতে পারেননি। রান্নাও করতে পারেননি। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন ভবনের নিচ তলার বাসিন্দারা।’
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাথ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বেলা ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৮ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে।