শনিবার (৫ আগস্ট) বিকেলে করপোরেশন কার্যালয়ে সভা শেষে গাড়িযোগে নগরীর বহদ্দারহাট পর্যন্ত গেলেও বাড়ির সামনে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় মূল সড়ক থেকে রিকশায় চড়ে ফিরতে হয়েছে।
জানা গেছে, জলাবদ্ধতার এমন দুর্ভোগ থেকে থেকে পরিত্রাণে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকায় চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), সিটি করপোরেশন (চসিক) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো)। প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে সহসা মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট, বাদুরতলা থেকে কাপাসগোলাসহ বিভিন্ন সড়কে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমেছে। পানিতে বিকল হয়ে পড়ে আছে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বহু যানবাহন। আবার বহু সড়কে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় যানচলাচল বন্ধ রয়েছে, ফলে সড়কের দুই পাশে যানবাহনের দীর্ঘ জট দেখা গেছে।
পানি ঢুকেছে চাকতাই-খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন পণ্যের গুদামে। নগরীর বাদুরতলা, বাকলিয়া মাস্টার পোল, কমার্স কলেজ এলাকায় বাসা-বাড়িতে পানি প্রবেশের পাশাপাশি বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে পণ্য।
এছাড়া নগরীর বাকলিয়া মিয়াখান নগর, চকবাজার, ষোলশহর, হালিশহর, মুরাদপুর, চান্দগাঁও, বলিরহাট, ছোট পুল, বড়পুল, মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ আবাসিক, রিয়াজুদ্দিন বাজার, মেহেদীবাগ, ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতায় সকাল থেকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক আলম বলেন, গাড়িতে পানি ঢুকে ৩০০ টাকা দামের ফিল্টার নষ্ট হয়ে গেছে। পরে এটা লাগিয়ে হাঁটু পানিতে যাত্রী পরিবহন করছি। কি করবো পেট তো আর পানি ওঠা বুঝে না। তাই ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি।
বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা নিঝুম বলেন, গতকালকের মতো আজকেও দোকানে পানি উঠেছে। বেচা-কেনা নেই। খুব কষ্টে আছি।
বাদুরতলা এলাকার বাসিন্দা সৌরভ জানান, এতো এতো উন্নয়নের কাজ চলছে, কিন্তু জলাবদ্ধতা সিরসনের কোনো অগ্রগতি নেই। সারাজীবন বর্ষায় কষ্ট পেয়ে আসছি, এখনো সমান কষ্ট ভোগ করে যাচ্ছি।
বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, বাসায় পানি ওঠাতে রান্না-বান্না করতে পারিনি। হোটেল থেকে কিনে দুপুরে খেয়েছি। রাতের কথা বলতে পারছি না।
শোলক বহরের বাসিন্দা লেখক ও সংগঠক যিকরু হাবিবীল ওয়াহেদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর কাজের সমন্বয়হীনতা, দীর্ঘসূত্রিতা, অদূরদর্শিতার কারণে শহরের লক্ষ নগরবাসীকে আজ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নালা নর্দমা পরিষ্কার না করার কারণও অন্যতম এই জলাবদ্ধতার।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, শনিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নিম্নচাপের কারণে এ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টি আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে সিডিএ–এর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস দেশ বর্তমানকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সম্পূর্ণ সুফল পেতে হলে সরকারি অর্থ বরাদ্ধ দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি প্রকল্পের যেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলোরও সমাধান করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে। বর্জ্যকে যদি সম্পদে পরিণত করা যায় তাহলে চট্টগ্রাম নগরীতে আর জলাবদ্ধতা থাকবে না।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন বিগ্রেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও প্রকল্প পরিচালক মো. শাহ আলী দেশ বর্তমানকে বলেন, আমার প্রকল্পের অধীনে যে রেগুলেটর করছি তার মধ্যে বড় এলাকা কাভার করে মহেশখাল রেগুলেটর। বর্তমানে সেটি সচল থাকায় আগ্রাবাদ হালিশহর এলাকায় জোয়ারের পানি উঠেনি। যেখানে অন্য সময় ওই এলাকা জোয়ারের পানিতে আগে ডুবত। তাছাড়া ৪০ স্লুইচগেটের রেগুলেটরের মধ্যে আমার প্রকল্পের ৫টি ছাড়া বাকি ৩৫টি স্লুইচগেট সচল করলে এভাবে নগরীতে পানি উঠতো না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকল্পের ব্যয় ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে আমরা পেয়েছি ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। সরকার বাজেট দিয়েছে, যা আমরা পুরোপুরি হাতে পায়নি। সরকারি বরাদ্ধকৃত অর্থ হাতে পেলে এবং সিডিএ ভূমি অধিগ্রহণ শেষ করলে আমরা দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারব।