হরিয়ানায় ধর্মীয় মিছিলকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। এদের মধ্যে দুজন হোমগার্ড, মসজিদের এক ইমাম সহ আরও তিনজন সাধারণ নাগরিক। মঙ্গলবার পর্যন্ত ১১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দায়ের হয়েছে ৪১টি এফআইআর।
নতুন করে মঙ্গলবার রাতে গুরুগ্রামে সংঘর্ষ ছড়িয়েছে। যার পর রাজধানী দিল্লিতেও সতর্কতা জারি করেছে পুলিশ।
সোমবার হরিয়ানার নুহ’তে ব্রিজ মন্ডল জলাভিষেক যাত্রার আয়োজন করেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। গুরুগ্রাম-আলোয়ার হাইওয়েতে মিছিলে বাধা দেয় একদল যুবক।
তারা মিছিল লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। তার জেরেই তুমুল অশান্তি শুরু হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা। যারা মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন, নারী ও শিশু-সহ এমন ২ হাজার ৫০০ জন স্থানীয় একটি মন্দিরে আশ্রয় নেন।
সোমবার বিকেলে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। সংঘর্ষের জেরে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। গুজব ছড়ানোর আশঙ্কায় বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। মঙ্গলবার গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদ জেলার স্কুল, কলেজ-সহ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নুহ থেকে হিংসা ছড়াচ্ছে গুরুগ্রামেও।
সোমবার মাঝরাতে হামলা করা হয় অঞ্জুমান জামা মসজিদে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় সেখানে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দমকল বাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। যদিও মৃত্যু হয় ইমামের।
সূত্রের দাবি অনুসারে, সম্প্রতি বজরং দলের সদস্য এবং স্বঘোষিত গোরক্ষক মনু মানেসার সামাজিকমাধ্যমে একটি আপত্তিকর ভিডিও পোস্ট করেন। যা ভাইরাল হয়েছিল। তার জেরেই এই সংঘর্ষ। মনু এবং তার সহযোগীরা একাধিক ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত। গরুর ব্যবসায়ী দুই মুসলিম ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মনু বিতর্কিত ভিডিওতে খোলা চ্যালেঞ্জ করেন, ধর্মীয় যাত্রা চলাকালীন মেওয়াটেই থাকবেন। এলাকায় অপরাধী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত মনুকে মিছিলে দেখার পরেই অশান্তি ছড়ায় বলে জানা গিয়েছে। এদিকে প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, উসকানিমূলক ভিডিও ভাইরাল হলেও নিষ্ক্রিয় ছিল পুলিশ। এর ফলেই সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে ক্ষোভ জানিয়ে নুহ’র বিধায়ক চৌধুরী আফতাব আহমেদ। তিন বলেন, “এটা প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার আগে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। ঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ করা হলে এই অবস্থা হত না। মনু মিছিল রয়েছে, এই গুজব অশান্তির অন্যতম কারণ।”
এদিকে গোষ্ঠী সংঘর্ষের মধ্যেই দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল করবে বলে জানিয়েছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দল। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হল সুপ্রিম কোর্টে। ওই মিছিলের ফলে নতুন করে অশান্তি ছড়াতে পারে বলে আবেদনে জানানো হয়েছে।