26 C
Chittagong
বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদসারাদেশআবারও দেশসেবার সুযোগ চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আবারও দেশসেবার সুযোগ চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিশেষ প্রতিবেদক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে। এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ আরো উন্নত হবে। একমাত্র নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। নৌকা ক্ষমতায় আছে বলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ করে দেবেন। সেটাই আমি আপনাদের কাছে চাই।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আমার সংসার। বাবা, ভাই ও বোনের স্নেহ আপনাদের কাছ থেকে পেয়েছি। এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য, আপনাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য আমি বাবার মতো জীবন দিতে প্রস্তুত।’

বুধবার (২ আগস্ট) রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি কত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। ক্ষমতায় থাকলে তারা লুট করে। না থাকলেও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তারা শুধু জ্বালাও-পোড়াও আর ধ্বংসই করতে পারে। তিনি আরো বলেন, অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে অনেক আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছি। মানুষ এখন শান্তিতে ভোট দিতে পারে। ভোট দেওয়ার জন্য ভোটার তালিকাও করেছি। আমরা প্রত্যেক এলাকায় উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। নারীদের জন্য কাজের সুবিধা করে দিয়েছি। আমাদের কাজের লক্ষ্য দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করা, দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নতি করা। এ অঞ্চলে জীবনেও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে না, মঙ্গা দেখা দেবে না। বাংলাদেশে কোনো ভূমিহীন মানুষ থাকবে না। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নও করব।

সরকারপ্রধান বলেন, সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। কয়লার দাম ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ নিয়ে কয়েকদিন কষ্ট হয়েছে। এরপর এখন ঠিক হয়ে গেছে। বিদ্যুতের আর কোনো সমস্যা থাকবে না। আমি খালি হাতে আসিনি। আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। কতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করেছি, যাতে প্রত্যেকটা উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় তার ব্যবস্থা করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় রংপুরে কখনো মঙ্গা হয়নি। এ দল সরকারে এলে এবং নৌকায় ভোট দিলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, আমরা তা প্রমাণ করেছি। আমরা ক্ষমতায় আসার পর এসবের পরিবর্তন হয়েছে। সাড়ে ১৪ বছর যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান আমরা করতে পেরেছি। রংপুরকে বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগ কৃষকের বন্ধু। কৃষকদের জন্য কুড়িগ্রামে ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছি। সারের দাম কমিয়ে দিয়েছি। অথচ খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে কৃষক সার চাইলে গুলি করে হত্যা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রি-প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত কারও বই কিনতে হয় না। আওয়ামী লীগ সরকার বিনামূল্যে বই দিচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের, যাতে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়। প্রত্যেক উপজেলায় আমরা একটি করে সরকারি স্কুল ও কলেজ করে দিয়েছি। এখন একটি করে কারিগরি স্কুল করে দিচ্ছি। বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রবাসী ব্যাংক করেছি। জমিজমা বিক্রি করে বিদেশ যেতে হবে না। যুবসমাজ যেন চাকরি ও কাজ পায় সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মানুষের কল্যাণে কাজ করে। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলে কাজ হয়। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকায় ভোট দেওয়ায় আজকে দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে।’

এর আগে দুপুর ২টায় রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি রংপুর সেনানিবাস হেলিপ্যাডে পৌঁছায়। এরপর সড়কপথে সার্কিট হাউসে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে জনসভায় যোগ দেন।

দুপুর সোয়া ১২টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে জনসভার কার্যক্রম। রংপুরের ঐতিহাসিক জিলা স্কুল মাঠ নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে যায়। মাঠ ছাড়িয়ে প্রধান সড়কের দুদিকে অবস্থান নেন বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। নানা রঙের পোশাক আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে গান গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়া নৌপরিবহনমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন ও সুজিত রায় নন্দী, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান জনসভায় যোগ দেন।

২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারসহ আরো পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এতে ব্যয় হবে ২ হাজার কোটি টাকা।

বিকেলে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাসমাবেশ থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে এই সমাবেশ এক মানবসমুদ্রে পরিণত হয়। এসব প্রকল্প বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন হবে। এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আরো গতি পাবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে।

যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর জেলার বিট্যাক সেন্টার, রংপুর মেডিকেল কলেজের মহিলা হোস্টেল এবং বিএমডিএ-র আঞ্চলিক অফিস।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে, সেসব হলো- শেখ রাসেল মিডিয়া সেন্টার, শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল সুইমিং পুল, রংপুর পালিছড়া স্টেডিয়াম এবং বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স।

রংপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে প্রকল্পগুলো হলো- রংপুর সিটি সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাল, রংপুর সিটি অ্যাসফল্ট প্লান্ট এবং স্টোর ইয়ার্ড। এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্পগুলো হলো- নলয়া নদী পুনঃখনন (১৯.১৪ কিলোমিটার), আলাইকুমারী নদী পুনঃখনন (১৯.২৪ কিলোমিটার), নইমুলা বিল পুনঃখনন (১৪.৫৭ একর), চিথলী ফিল পুনঃখনন (১৯.৬৩ একর), ভারারদহ এবং পটুয়াকামরি বিল পুনঃখনন (২৮. ৮৯ একর)।

রংপুর শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে রংপুর উপশহরে নির্মিত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, যা এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে।