‘সেবাই শক্তি’ এ স্লোগানে পিছিয়ে পড়া পরিবারের নারীদের স্বাস্থ্য, পরিবারের কল্যাণ এবং স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করছে মমতা নগর মাতৃসদন। মমতা নগর মাতৃসনদে স্বল্প খরচে সেবা নিতে পারেন দুস্থসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। চলতি বছরের গেল জুন পর্যন্ত নরমাল ও সিজারিয়ান মিলে এক লাখ ডেলিভারি ছাড়িয়েছে। যেখানে ৭০ শতাংশের বেশি নরমাল ডেলিভারি বলে জানান কর্তৃপক্ষ। ১৯৮৩ সালে মমতার প্রতিষ্ঠা হলেও ১৯৮৪ সাল থেকে প্রতিনিয়ত স্বল্প খরচে পরিবার পরিকল্পনা এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে এনজিও পরিচালিত বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী এই প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার চানমারি রোডে অবস্থিত। চারতলা ভবনে শয্যার সংখ্যা ৬০ ও কেবিন রয়েছে ১৮টি। মমতার প্রধান বৈশিষ্ট্য কম খরচে চিকিৎসক, ঔষধ, সিজারসহ রেডিওলজি বা প্যাথলজির রিপোর্ট প্রদান। মাতৃসনদ সূত্রে জানা গেছে, এখানে ৩, ৮শ টাকায় থাকার ব্যবস্থাসহ নরমাল ডেলিভারি ও মানসম্মত ওষুধ এবং থাকার ব্যবস্থাসহ সিজার করানো হয় সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকায়। এছাড়া কম খরচে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাসহ করা হয় আল্ট্রাসনোগ্রাম এবং প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে রয়েছে বাজার মূল্যের চেয়ে শতকরা ১০ থেকে ২০ টাকা কম মূল্যে ওষুধ ক্রয়ের সুযোগ। আছে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সুবিধাও।
এক সময় মমতা গরীবের হাসপাতাল ছিল। দিনে, দিনে সেই মমতা আজ সমাজের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সবাইকে আকৃষ্ট করছে। প্রতিদিনই মমতায় মা ও শিশুর চিকিৎসায় মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। মমতায় আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারী কর্মকর্তা বলেন, হাসপাতালগুলোর ভুল চিকিৎসা, অনিয়ম, ঘুষ, ডাক্তারের অবহেলা, দুই নম্বর ওষুধ, ভুল রিপোর্টসহ হাজারও অভিযোগের ভিড়ে একমাত্র মমতাই মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছে।
নগর মাতৃসদনে চিকিৎসা নিতে নাফিসা হক জানান, এখানে ডাক্তারদের ব্যবহারও খুব ভাল এবং আন্তরিক। দেওয়া হয় কম খরচে ভালো চিকিৎসা। রোগীদের জন্য এটি বর্তমানে বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান।
ফৈরদৌস আরা বলেন, আমার প্রথম বাচ্চা ২০১৭ সালে লালখান বাজার মমতায় জন্মলাভ করেছে। এবার ও তাই এখানে এসেছি।
এখানে চিকিৎসা নিতে আসা শ্রাবণী দাসের স্বামী রিপন দাস জানান, এ হাসপাতালে আমার এক পুত্র সন্তান হয়েছে। সন্তান ও মা দু’জনই সুস্থ আছে। কম খরচে খুব ভালো চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখানে খুব সুন্দরভাবে রোগীর সেবা-যত্ন করছে।
মাতৃসদনটির সুপারভাইজার রুশমি চৌধুরী বলেন, সর্বদা সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত থাকি, যাতে রোগীদের কোনো অবহেলা না হয়। রোগীদের প্রতিনিয়ত সেবা দিতে কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর।
দায়িত্বে থাকা স্টোর কিপার মো. খোকন মিয়া বলেন, কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করে রোগীদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের ওষুদ সরবরাহ করতে। সেই অনুযায়ী রোগীরা সব ওষুদ আমাদের থেকে পাই। তাছাড়াও বেশীরভাগ রোগী চিকিৎসা সেবা শেষে আমাদের ন্যায্য মূল্যের ফার্মেসী থেকে ওষুদ নিয়ে যায়।
হাসপাতালের পরিচালক তৌহিদ আহমেদ জানান, চট্টগ্রামে একমাত্র মমতাই নরমাল ডেলিভারীতে বেশ বিশ্বাসী। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে বিনা সিজারে বাচ্চা প্রসব করানোর। এখানে সিজারের হার একদমই কম। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানটি পরিবার পরিকল্পনা এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবায় দেশ সেরা প্রতিষ্ঠাগুলো মধ্যে এটি অন্যতম। জাতীয় জনসংখ্যা দিবসে সেরা সংগঠন হিসাবে ১৪ বার জাতীয় পুরস্কার পায় আমরা। যেটি ধারে কাছেও অন্য কোন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
সাবেক সরকারী কর্মকর্তা ও নগর মাতৃসদনের প্রশাসক এ এম এরশাদ বলেন, এটি মূলত দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এনজিওর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করা হয়। গেল জুন মাস পর্যন্ত আমাদের ডেলিভারী ১ লাখ ছাড়িয়েছে। ৩৯ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা অবিরত দিয়ে যাচ্ছে। ২০০১ সাল থেকে হাসপাতাল হিসাবে বৃহৎ পরিসরে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। স্বল্পমূল্যে আমরা ওষুধ, চিকিৎসা, অ্যাম্বুলেন্স ও বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করে থাকি।
প্রসঙ্গত, সমাজ সেবায় নিবেদিত প্রাণ আলহাজ্ব রফিক আহমদ ১৯৮৩ সালে আর্ত মানবতার সেবার লক্ষ্যে কিছু সহযোগীদের নিয়ে যে প্রতিষ্ঠান গড়েছেন, সেই মমতা বর্তমানে বিভিন্নভাবে ৩০ লক্ষেরও অধিক মানুষদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তাই তো আর্ত মানবতার সেবায় “মমতা” আজকে একটি ব্রান্ড হিসেবে সুপরিচিত।