সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পর্যটকবাহী নৌকা থেকে গ্রেপ্তার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২৪ শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ প্রথমে ৩৪ জনকেই বুয়েটের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী বলে জানালেও পরে সবার পরিচয়সহ জানানো হয় ৩৪ জনের মধ্যে ২৪ জন বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থী, সাতজন সাবেক শিক্ষার্থী এবং তিনজন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক।
গতকাল রোববার (৩০ জুলাই) বিকেলে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের নতুনবাজার পাটলাই নদী দিয়ে ট্যাকেরঘাট পর্যটন এলাকায় যাওয়ার পথে তাদের আটক করে পুলিশ। পরে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা করে। মামলার পর সোমবার (৩১ জুলাই) তাদেরকে আদালতে তোলা হলে তাহেরপুর আমলি আদালতের বিচারক ফারহান সাদিক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) রাজন কুমার দাস জানান, গ্রেপ্তার ৩৪ জনের মধ্যে ২৪ জন বুয়েটের বর্তমান ও ৭ জন সাবেক শিক্ষার্থী। বাকি তিনজন অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশ দ্রুত তাদের রিমান্ডের আবেদন করবে।
গ্রেপ্তার বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীরা হলেন- মেটেরিয়ালস অ্যান্ড মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র আফিফ আনোয়ার (২৪), মেকানিক্যাল বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী বখতিয়ার নাফিস (২৪), ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী, মো. সাইখ সাদিক(২১), নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ইসমাইল ইবনে আজাদ (২১), সাব্বির আহম্মেদ (২১), ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী তাজিমুর রাফি (২০), বস্তু ও ধাতব কৌশল বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাদ আদনান অপি (২২), ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. শামীম আল রাজি (২০), যন্ত্র কৌশল বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আব্দুলাহ আল মুকিত (২৩), শিল্প ও উৎপাদন কৌশল বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. জায়িম সরকার (২১), সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হাইছাম বিন মাহবুব (২৫), যন্ত্র কৌশল বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুর হাসান (২২), ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী খালিদ আম্মার (২১), ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ফাহাদুল ইসলাম (২৩), ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী তানভির আরাফাত ফাহিম (২১), ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী এ টি এম আবরার মুহতাদী (২১), ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মাছুদুর রহমানের ছেলে মো. ফয়সাল হাবিব (২০), বস্তু ও ধাতব কৌশল বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আনোয়ারুল্লাহ সিদ্দিকী (২৮), মেকানিকাল বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আলী আম্মার মৌয়াজ (২৫), পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাস্টার্স ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাশেদ রায়হান (২৪), নেভাল আর্কিটেকচার বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব শাহরিয়ার (২৩), মেকানিক্যাল বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ফায়েজ উস সোয়াইব (২৪), কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোখলেছুর রহমানের ছেলে আব্দুর রাফি (২৫) এবং তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মাঈন উদ্দিন (২৪)।
বুয়েটের সাবেক ৭ জন হলেন- বাগেরহাটের মোল্লাহাট থানার কাচনা গ্রামের সেকান্দার আলীর ছেলে মো. বাকি বিল্লাহ (২৮), কুমিল্লার লাকসাম থানার চিকুনীয়া গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে মাহাদি হাসান (২৩), সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার চড়িয়া উজির গ্রামের মো. হায়দার আলীর ছেলে টি এম তানভির হোসেন (২৬), চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার পূর্ব বাকলিয়া গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে আশ্রাফ আলী (২৫), কুষ্টিয়া সদর থানার মাহতাবউদ্দিন সড়কের মো. মোসাদ্দেক হোসেনের ছেলে মো. মাহমুদ হাসান (২৫), কুমিল্লার বরুড়া থানার বিষ্ণপুর গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে মো. এহসানুল হক (২৪) ও চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার নয়লাভাঙা গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে আব্দুল বারি (২৪)
অন্যান্য ৩ জন হলেন- নীলফামারীর ডিমলা থানার সাতজান গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে মো. আব্দুল্লাহ মিয়া (১৮), বুয়েটের সিনিয়র সহকারী রেজিস্ট্রার আবু হানিফের ছেলে সাজিদ (১৭) ও বাগেরহাট সদর থানার বারাকপুর গ্রামের মো. হায়াত আলীর ছেলে তানিমুল ইসলাম (১৫)।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. এহসান শাহ্ বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা সরকারবিরোধী নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনে হচ্ছে- এরা সবাই ইসলামী ছাত্রশিবির কর্তৃক মোটিভেটেড।