অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগের বিষয়ে দলীয় অবস্থান ঠিক করতে ছয়টি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। বিষয়ভিত্তিক এই কমিটিগুলো সংস্কার নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে দলের কর্মকৌশল প্রণয়ন করবে। গঠিত ছয়টি কমিটি হলো রাষ্ট্র সংস্কার, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, নির্বাচন কমিশন এবং ব্যাংকিং ও বাণিজ্য সংস্কার। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারসহ আরো কয়েকটি কমিটি গঠনেরও কথা রয়েছে।
এর বাইরে ২০০২ সালে বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা অধিকতর যুগোপযোগী এবং এর প্রচারের জন্য স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি রাষ্ট্র গঠনে ৩১ দফা প্রচার ও জনমত তৈরিতে কাজ করবে।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্র সংস্কার করার পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত জানান। এসব কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে কমিশনগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মূলত সরকার গঠিত কমিটির সংস্কারবিষয়ক কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে দলের কৌশল তৈরি এবং সে অনুসারে প্রাসঙ্গিক কাজ প্রণয়ন করতে কাজ করবেন তাঁরা। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করলে বিএনপি যাতে তাদের পরামর্শ তুলে ধরতে পারে সেই প্রস্তুতিও নেবে এসব কমিটি।
দলের নেতারা বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগকে সার্বিক সহায়তা দেবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে সংস্কারে আগাম প্রস্তাবও দিতে পারে কমিটিগুলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়ে বিএনপি কৌশল তৈরি করে তাদের আন্দোলনের মিত্র দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়ে দলের অবস্থান নির্ধারণ ও প্রাসঙ্গিক কাজ করাই হবে কমিটির মূল কাজ। সরকার চাইলে বিএনপি সংস্কার নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করবে।’
কোন কমিটিতে কারা আছেন
বিএনপি নেতারা জানান, প্রাথমিকভাবে খসড়া কমিটি করা হয়েছে। এতে আরো সদস্য যুক্ত করা হবে।
দলীয় সূত্র মতে, রাষ্ট্র সংস্কার নামের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুরো সংস্কার কাজগুলো এই কমিটি সমন্বয় করবে। কমিটির প্রধান হচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদ এবং সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ আছেন এই কমিটিতে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশন সংস্কার নিয়ে কাজ করবেন সালাউদ্দিন আহমেদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাবেক আমলা বিজন কান্তি সরকার। প্রশাসন সংস্কার নিয়ে একই কমিটি কাজ করবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কমিটিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে প্রধান করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটিতে আছেন নজরুল ইসলাম খান ও সালাউদ্দিন আহমেদ। এই কমিটিতে নির্বাচন কমিশনের সাবেক একজন কর্মকর্তাও থাকবেন। ব্যাংকিং ও বাণিজ্য কমিটিতে আছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আব্দুল আউয়াল মিন্টু।
এর আগে গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই কমিটি গঠন ও তাদের কাজ কী হবে তা নিয়ে আলোচনা করা হয় বলে বিএনপির পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। ক্রেডিট: কালের কণ্ঠ