23.8 C
Chittagong
রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদআইন আদালতসার্টিফিকেট আদালতে ঝুলে আছে ৫ হাজার কোটির মামলা!

সার্টিফিকেট আদালতে ঝুলে আছে ৫ হাজার কোটির মামলা!

কালের কণ্ঠ

দুইশ কোটি টাকা পাওনা আদায়ে ২০১১ সালের ২৪ অক্টোবর উপকর কমিশনার শেখ মো. মনিরুজ্জামান সার্টিফিকেট মামলা করেন। ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর খাতক এস শরফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি গ্রেপ্তার হননি। এর পর আরো কয়েকবার পরোয়ানা পাঠানো হলেও তা কার্যকর হয়নি।

সর্বশেষ গত ২৬ মে পুনরায় পরোয়ানা পাঠানো হলে গুলশান থানার পুলিশ তা বিনা তামিলে ফেরত পাঠায়। এতে এক যুগ ধরে মামলাটি নিষ্পত্তি না হয়ে ঝুলে আছে।

এস শরফুদ্দিন আহমেদের আইনজীবী সুবর্ণা নাসরিন বলেন, ‘আদালত তাঁর মতো চলছে। কেন মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না—সেটা বলতে পারব না।’

গুলশান থানার ওসি মো. তৌহিদ আহম্মেদ বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্বে এসেছি। সব কিছু এখনো গোছাতে পারিনি। এ বিষয়ে ওয়ারেন্ট অফিসারের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানাতে পারব।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু এই মামলা নয়, ঢাকার জেনারেল সার্টিফিকেট আদালতে এমন প্রায় দুই হাজার মামলা ঝুলে আছে।

এসব মামলার পাওনা পরিশোধ হলে সরকার প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পেত।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জেনারেল সার্টিফিকেট আদালত যাবতীয় সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের বকেয়া/অনাদায়ী অর্থ আদায় অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে সরকারি দাবি আদায় আইন, ১৯১৩-এর অধীনে করা বিভিন্ন মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর মধ্যে আবগারি কর, শুল্ক, আয়কর, জরিমানা, পৌরকর, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ঋণ, স্ট্যাম্প ঘাটতি শুল্ক ইত্যাদি বিষয় রয়েছে। দীর্ঘসূত্রতা কমানো, সহজে ও স্বল্প সময়ে দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে এসব সরকারি পাওনা আদায় করার বিধান রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাতকের বিরুদ্ধে মামলা করে সরকারি প্রতিষ্ঠান আর খোঁজ রাখে না।

আদালত থেকে পরোয়ানা জারি হলেও সেটা কার্যকর হয় না। থানায় পরোয়ানা ফেলে রাখা হয় এবং বিনা তামিলে সেটা ফেরত পাঠানো হয়ে থাকে। এতে দেনাদারকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয় না।

বর্তমানে ঢাকার জেনারেল সার্টিফিকেট আদালতে এক হাজার ৯৬৭টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে মূল্য সংযোজন কর বিষয়ক (ভ্যাট) ৪৪৩টি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ৩২৬টি, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ১৯১টি, কাস্টমসের ১৩১টি, সোনালী ব্যাংকের ১১০টি, ভূমি অধিগ্রহণের (এলএ) ১১০টি, জনতা ব্যাংকের ১০১টি, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৯১টি মামলা রয়েছে।

২০০৫ সালের ১৪ জুলাই পাঁচ কোটি ৮৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকার রাজস্ব আদায়ে মেসার্স আরগোসী অ্যাপারেলস লিমিটেডের এস এম আরিফের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা করেন কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। তবে পুলিশ ও কর্তৃপক্ষ যথাযথ কাজ না করায় ১৯ বছরেও মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি।

এমন নজির রয়েছে অনেক। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই পর্যন্ত ২২৩টি মামলায় ১৯৮ কোটি ৫৫ লাখ ৮৩ হাজার ৯৪৯ টাকা পাওনার তথ্য উল্লেখ রয়েছে। এই অর্থবছরে তিন হাজার ১২৯টি মামলার নিষ্পত্তির বিপরীতে এক হাজার ৪৩৮ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার ৮৯১ টাকা আদায় হয়েছে। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত এক হাজার ৯৬৭টি মামলায় চার হাজার ৯৭৫ কোটি ৮৮ লাখ ৪৪ হাজার ৮০৭ টাকা রাজস্ব পাওনা রয়েছে।পরোয়ানা ফিরে আসে না

গ্রেপ্তারি বা ক্রোকি পরোয়ানা ফেরত না এলে আদালত পরবর্তী কার্যক্রম চালাতে পারেন না। দেখা গেছে, আইন অনুযায়ী পরোয়ানা পাঠানো হলেও সেটা কার্যকর হয় না।

বর্তমানে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় ৭৭৫টি এবং ঢাকা জেলার সাতটি থানায় ৯৬টি গ্রেপ্তারি/ক্রোকি পরোয়ানা ঝুলে আছে। এর মধ্যে সাভার মডেল থানায় সবচেয়ে বেশি ৪১টি পরোয়ানা রয়েছে। এসব পরোয়ানা তামিল হয়নি।

২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ১২৬ কোটি চার লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা করে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে তা তামিল হয়নি।

রিজেন্ট এয়ারওয়েজ লিমিটেডের আইনজীবী রিয়াজ আহমেদ ফেরদৌস বলেন, অনেক মামলা রয়েছে। এখন স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারব না। এই কথা বলেই তিনি ফোন রেখে দেন।

যেভাবে চলে সার্টিফিকেট মামলা

সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের আদায়যোগ্য পাওনা যা তামাদি হয়নি মর্মে সন্তুষ্ট হলে পিডিআর অ্যাক্ট, ১৯১৩-এর ৪ ধারা অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হয়। দেনাদারের কাছে দাবিদারের পাওনা জানিয়ে ৭ ধারা অনুযায়ী নোটিশ জারি করা হয়। দেনাদার দাবি করা পাওনা পরিশোধ করেন অথবা সম্পূর্ণ/আংশিক দাবি অস্বীকার করে আপত্তি দাখিল করতে পারেন। শুনানি শেষে আপত্তি নিষ্পত্তি করা হয়। সার্টিফিকেট কর্মকর্তার আদেশ গ্রহণ না করে দেনাদার সার্টিফিকেট কর্মকর্তার আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারেন।

আপত্তি বা আপিল দায়েরের ভিত্তি না থাকলে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেনাদার কর্তৃক দাবিকৃত টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে, প্রথমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং পরে স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও নিলামে বিক্রি করে দাবিকৃত টাকা আদায়ের কার্যক্রম নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের উপপরিচালক (আইন) মুন্সী মো. এনামুল হক বলেন, ‘শতাধিক মামলা নিষ্পত্তি করে পাওনা আদায়ে আদালতকে সহযোগিতা করেছি। ঝুলে থাকা মামলা নিষ্পত্তিতে সহযোগিতা করছি।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, গত মাসে ৩০৩টি ক্রোকি পরোয়ানা ছিল। এর মধ্যে ২৭টি নিষ্পত্তি হয়েছে।

ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘নোটিশ পাঠালে খাতককে ঠিকানায় পাওয়া যায় না। তবু আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। মামলা কেন নিষ্পত্তি হচ্ছে না, এর কারণ খুঁজে বের করে পদক্ষেপ নেব।’