ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি, হলে আবাসন প্রক্রিয়া ও ক্যাম্পাস এলাকায় নিরাপত্তা নিয়ে ২৭টি প্রস্তাবনা দিয়েছে ইউনিভার্সিটি রিফরমেশন ইনিশিয়েটিভস (ইউআরআই)। ২৭টি প্রস্তাবের মধ্যে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক আটটি, আবাসিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ১১টি ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা সংক্রান্ত আটটি প্রস্তাব রয়েছে।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা জানানো হয়।
দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের আটটি প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ও একাডেমিক স্থানে সব প্রকার দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ; রাজনৈতিক পরিচয় বা সংশ্লিষ্টতা ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আবাসিক ও একাডেমিক স্থানে প্রভাব বিস্তার ও বিশেষ বিবেচনা লাভের প্রচেষ্টা না চালানো; যদি কোনো শিক্ষার্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয় তবে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং এই মর্মে সিন্ডিকেটে আইন পাস করা; আবাসিক ও একাডেমিক স্থানে দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের প্রচেষ্টা ব্যতিরেকে ব্যক্তিগত পরিসরে কেউ কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করলে বা নিজস্ব মত প্রকাশ করলে তাকে কোনো শাস্তির আওতাভূক্ত না করা; দ্রুততম সময়ের মধ্যে হল ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বৈধ শিক্ষার্থীরা নির্বাচনে প্রার্থী বা ভোটার হিসেবে অংশ নিতে পারবে এবং স্নাতক পর্যায়ের বৈধ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ভর্তির সেশন ও বর্তমান শিক্ষাবর্ষের পার্থক্য ছয় ও স্নাতকোত্তরে ভর্তি, বর্তমান সেশনের পার্থক্য ২-এর বেশি না হওয়া; ডাকসু বা হল সংসদ নির্বাচনে সব প্রার্থীকে স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণ করা ও প্যানেল হিসেবে কেউ নির্বাচনে কোনো প্রকার প্রচার-প্রচারণা চালাতে না পারা; ছাত্র-শিক্ষকের সমন্বয়ে অভিজ্ঞ প্যানেল তৈরি করে ডাকসুর সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এটিকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলার সুপারিশমালা প্রস্তুত করা ও শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের সংশোধনী বাস্তবায়ন করা।
আবাসন ব্যবস্থাপনা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে : আর্থিক অবস্থা, বাসস্থানের দূরত্ব ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষ থেকে হলের বৈধ সিট প্রদান নিশ্চিত করা; আর্থিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের সিট দিতে না পারলে মাসিক বৃত্তি প্রদান; হলে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অবস্থান ও ফলাফল প্রকাশের দুই মাসের মধ্যে সিট বাতিল; সিট প্রদান ও সিট বাতিলে সম্পূর্ণ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ; সিট খালি হলে সার্কুলার জারি করে সিট প্রদান; অবৈধভাবে সিটে অবস্থান করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও এসংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি; গণরুম প্রথার বিলুপ্তি; ফার্স্ট এইড বুথ ও ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত; প্রশাসনের পুর্ণাঙ্গ আবাসিকীকরণের রোডম্যাপ; ঝুঁকিপূর্ণ আবাসিক ভবন সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ; আবাসিক শিক্ষার্থীদের পুষ্টিমান নিশ্চিতে ক্যান্টিন ও মেসে ভর্তুকির ব্যবস্থা করা।
ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে : আবাসিক হলে প্রতি মাসে মতবিনিময়সভা চালু এবং বিভাগ ও হলে ‘অভিযোগ বক্স’ ব্যবস্থা চালু ও সুষ্ঠু পরিচালনা; র্যাগিং ও নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা ও ভবিষ্যতে জড়িত হলে বহিষ্কার করা; ক্যান্টিন, দোকান ও মেসে চাঁদাবাজি বন্ধ এবং প্রমাণ সাপেক্ষে অপরাধীদের বহিষ্কার করা; একাডেমিক ভবনে ক্যান্টিনের ব্যবস্থা ও খাবারের মূল্য নির্ধারণ; ক্যাম্পাসে ভাসমান দোকান উচ্ছেদ; সিকিউরিটি অ্যান্ড সার্ভেইল্যান্স বক্সে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা; বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বৈরাচারী শাসনামলে সংগঠিত সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত পরিচালনা করা ও তদন্ত কার্য পরিচালনার জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করা ও বিভিন্ন সময়ের সংঘটিত হামলা নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে শাস্তির আওতায় আনা; ক্যাম্পাসে ভারী যান চলাচল বন্ধ এবং অ্যাম্বুল্যান্স ও ক্যাম্পাসগামী বাহন ছাড়া সব প্রকার বহিরাগত যান চলাচলে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির মুখপাত্র শহীদুল্লাহ্ হলের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আদনান মুস্তারি এবং বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের শিক্ষার্থী রাফিয়া রেহনুমা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী তামিম মুনতাসির, ফজলুল হক মুসলিম হলের আনোয়ার ইব্রাহীম বিপ্লব, বিজয় একাত্তর হলের জোবায়ের হোসেন শাহেদ, ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের রেদওয়ানুল হাসান শান্ত প্রমুখ।