যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ জেনারেল শনিবার মধ্যপ্রাচ্যে এক অঘোষিত সফর শুরু করেছেন। এর উদ্দেশ্য নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি রোধ করার উপায় নিয়ে আলোচনা করা, যা বৃহত্তর সংঘাতে পরিণত হতে পারে। এই অঞ্চলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের হামলার হুমকি মোকাবেলার প্রস্তুতি চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর জেনারেল ও জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান সি কিউ ব্রাউন জর্দানে যাওয়ার মাধ্যমে তার সফর শুরু করেছেন।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মিসর ও ইসরায়েলও সফর করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সেখানে তিনি সামরিক নেতাদের মতামত শুনবেন।
এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময়ের চুক্তি করতে চেষ্টা করছে। ব্রাউন বলেছেন, ‘যদি (চুক্তি) চূড়ান্ত হয়, তাহলে উত্তেজনা হ্রাসে সহায়ক হবে।’
জর্দানে অবতরণের আগে ব্রাউন রয়টার্সকে বলেন, ‘একই সময়ে, আমি যখন আমার সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলি, তখন আমরা কিভাবে কোনো ধরনের বৃহত্তর উত্তেজনা প্রতিরোধ করতে পারি এবং বৃহত্তর সংঘাত এড়াতে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রভাব সীমিত করার চেষ্টা করছে। যুদ্ধ ইতিমধ্যে ১১তম মাসে পা দিয়েছে। এই সংঘাতে গাজার বিশাল অংশকে ধ্বংস হয়েছে, ইসরায়েল ও লেবাননের ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ আন্দোলনের মধ্যে আন্ত সীমান্ত সংঘর্ষের সৃষ্টি করেছে এবং ইয়েমেনের হুতিদের লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার উদ্রেক করেছে।
এদিকে সিরিয়া, ইরাক ও জর্দানে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা মার্কিন সেনাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী মধ্যপ্রাচ্যে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে, যাতে ইরান বা তার মিত্রদের বড় ধরনের নতুন আক্রমণ প্রতিহত করা যায়। এ জন্য বিমানবাহী রণতরি আব্রাহাম লিংকনলে পাঠানো হয়েছে, যা থিওডোর রুজভেল্টের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে একটি এফ-২২ যুদ্ধবিমান এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রবাহী একটি সাবমেরিনও মোতায়েন করেছে।
মার্কিন বাহিনীকে সুরক্ষিত করা ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ ছিল উল্লেখ করে ব্রাউন বলেছেন, ‘আমরা অতিরিক্ত সামর্থ্য নিয়ে এসেছি একটি শক্তিশালী বার্তা দিতে এবং বৃহত্তর সংঘাত প্রতিরোধ করতে, পাশাপাশি আমাদের বাহিনীকে সুরক্ষিত করতে, যদি তাদের আক্রমণ করা হয়’
ইরানের প্রতিক্রিয়া
এদিকে ইরান হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের জন্য কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডটি গত মাসের শেষের দিকে যখন তিনি তেহরান সফর করছিলেন তখন ঘটে। এর জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে তেহরান। তবে ইসরায়েল এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেয়নি। একই সঙ্গে হিজবুল্লাহও প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে। কারণ গত মাসে ইসরায়েল বৈরুতে তাদের এক শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করেছে।।
ইরান প্রকাশ্যে হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানবে, তা স্পষ্ট করেনি। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, তারা ইরানের হুমকি কার্যকর হওয়ার যেকোনো লক্ষণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। ব্রাউন বলেন, ‘আমরা সতর্ক আছি, গোয়েন্দা তথ্য ও বাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছি।’
ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, ইরানের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি শুক্রবার ফরাসি ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ফোনালাপে বলেন, তার দেশের প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার রয়েছে।
এর আগে ১৩ এপ্রিল সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের দূতাবাসে হামলায় দুই ইরানি জেনারেল নিহত হওয়ার দুই সপ্তাহ পর ইসরায়েলের দিকে শত শত ড্রোন, ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আক্রমণ চালায় ইরান। এর ফলে দুটি বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা অধিকাংশ অস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছিল, যেগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার আগেই ধ্বংস হয়।
ইরান ও তার মিত্ররা কী করতে পারে, তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ব্রাউন। তবে তিনি ইসরায়েলি শীর্ষ জেনারেলের সঙ্গে বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিশেষত, আমি যখন আমার ইসরায়েলি সমকক্ষের সঙ্গে কথা বলব, তারা কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা আলোচনা করব, নির্ভর করবে হিজবুল্লাহ বা ইরানের পক্ষ থেকে কী প্রতিক্রিয়া আসে।’
গাজা উপত্যকায় গত বছরের ৭ অক্টোবর এ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। তখন হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে এক নজিরবিহীন হামলা চালায়। ইসরায়েলি পরিসংখ্যান অনুসারে, সে হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত এবং প্রায় ২৫০ জন জিম্মি হয়েছিল। তার পর থেকে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চলছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের প্রায় ২৩ লাখ মানুষ তাদের বাড়ি থেকে পালিয়েছে। সেখানে মারাত্মক ক্ষুধা ও রোগ দেখা দিয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, যুদ্ধে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।