ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে ছাত্র-জনতায় গণহত্যার দায়ে বিচারের দাবি উঠেছে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আলোচনা সভায়। একইসঙ্গে এতদিন গুম-খুনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করারও দাবি ওঠে।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণহত্যার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচার ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করলেও আওয়ামী লীগ সরকার নিশ্চুপ ছিলো, অথচ ছাত্র জনতার আন্দোলনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে অনেক শিশুকে হত্যা করেছে। এতদিনে যত গুম খুন হয়েছে এর সাথে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। শেখ হাসিনার নামে যে ক্যান্টনমেন্ট করা হয়েছে তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণ যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে যাতে ভবিষ্যতে বহির্বিশ্বের আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে। আওয়ামী লীগ প্রতিবেশী দেশের কাছে বাংলাদেশকে গোলাম বানিয়েছে। পুলিশকে পৃথিবীর নিকৃষ্ট বাহিনীতে পরিণত করেছে। পুলিশের মৃত্যুর জন্য শেখ হাসিনা দায়ী।
ভারতের উদ্দেশে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রভু হবেন না, বাংলাদেশের বন্ধু হতে ভারতের আহ্বান জানাই । বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করবে। গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার বিচার হবে, ভারতের কাছে আহ্বান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাইলে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠাতে হবে।
বিএনপি এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো কলঙ্ক যেনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গায়ে না লাগে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন করবো, বিএনপি চায় এই বিপ্লবের সফল পরিণতি। বিএনপি আওয়ামী লীগের পথ হাঁটতে চায় না, ক্ষমতায় গেলে কোনো দুর্নীতি চাঁদাবাজি চলবে না।
এসময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়নের দাবি তোলেন।
বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম বলেন, শেখ হাসিনা বিদায় নিলেও তার লোকেরা এখনও প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে বসে আছে, তাদের সরানো না গেলে ষড়যন্ত্র বন্ধ হবে না।
নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবি তুলে এই নেতা বলেন, কারচুপির নির্বাচন করেছে কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পুরো কমিশনকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। নয়তো কমিশন ঘেরাও করে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, লুটপাটের কারণে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে বিএনপি। তবে যারা ১৬ বছর জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কুৎসা রটিয়েছে তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান বিএনপির। কেউ যাতে সুযোগ নিতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, হাসিনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। যারা গুলির আদেশ দিয়েছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে যদি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা যায়, তাহলে সেই অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে পারে।
গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানের ফসল এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রশ্নবিদ্ধ, তাকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে, নয়তো ঝুঁকি থেকেই যাবে। প্রশাসনে সংস্কারের আগে রাষ্ট্রপতির অপসারণ চাই।
তিনি বলেন, অতীতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র থেকে বিরাজনীতিকরণের উদ্যোগ ছিলো, তাই দ্রুত গুছিয়ে নিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য রূপরেখা দিতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে, ছাত্রলীগ যুবলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করতে হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে পরিপত্র জারি করলে সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়ে যাবে।