চলমান আন্দোলনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণে রাজধানীর বাজারগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি তুলনামূলক অনেক কম। এর পরও গতকাল রবিবার খুচরা বাজারে চাল, মাছ, সবজিসহ কয়েকটি পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
দুই থেকে তিন দিনের ব্যবধানে চাল কেজিতে দু-তিন টাকা, সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা ও মাছ কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। নতুন করে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য চলমান পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল রাজধানীর বাড্ডা কাঁচাবাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকায়, করলা ৮০ থেকে ১০০, কাঁচা মরিচ ২৮০, ঢেঁড়স ও পটোল ৬০, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০, চালকুমড়া প্রতি পিস ৬০, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৩৫ থেকে ৪০, আলু ৬০ থেকে ৬৫, কাঁকরোল কেজি ৮০ থেকে ১০০, শসা ৮০ থেকে ১০০, কচুমুখি ৮০, টমেটো মানভেদে ১৬০ থেকে ২০০ এবং লাউ প্রতি পিস আকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয় গতকাল।
জোয়ারসাহারা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়ার কারণে পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কমে গেছে।
এ কারণে আমাদের কিছুটা বাড়তি দাম দিয়ে পণ্য আনতে হয়েছে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি চাল দুই-তিন টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতি কেজি সরু চাল (মিনিকেট) ৭২ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্রি-২৮ ও পাইজাম চাল প্রতি কেজি ৫৮ থেকে ৬২ এবং নাজিরশাইল ৭৬ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দেওয়া বাজারদরের তথ্যেও নতুন করে চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি দেখা গেছে। যেমন—টিসিবির গতকালের বাজারদর প্রতিবেদনে দেখা যায়, মিনিকেট চাল মানভেদে ৬৪ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে তা ছিল ৬০ থেকে ৭৮ টাকা। পাইজাম চাল কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মাসের মাঝখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও পরবর্তী সময়ে কারফিউয়ের কারণে পরিবহন সমস্যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। এতে দাম বেড়ে যায়। এখন আবার নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় এবং টানা দুই দিনের বৃষ্টির কারণে চালের দাম বেড়েছে।
রাজধানীর বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন গতকাল বলেন, ‘বাজারে চালের কোনো ঘাটতি নেই। চলমান সহিংসতার কারণে চাল পরিবহনে ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় গাড়িচালকরা ভাড়া অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে দাম কিছুটা বেড়ে গেছে।’
রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারে কথা হয় ক্রেতা আব্দুর রউফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নিত্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় চাল, সেই চালের দাম কয়েক দিনের ব্যবধানেই দুই দফা বেড়েছে। মূলত বাজারে সরকারের কোনো নজরদারি না থাকায় এমনটি হচ্ছে।’
মাছবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে মাছের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এর পরও বিক্রেতারা সরবরাহ সংকটের কথা বলে চাষের বড় মাছ কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। পাবদা, ট্যাংরাসহ বিভিন্ন ছোট মাছের দাম কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
গতকাল চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২২০ টাকা, বড় আকারের তেলাপিয়া ২৪০ থেকে ২৬০, কাতলা ৪৫০, চাষের পাবদা ৫৫০ থেকে ৬৫০, বড় আকারের ট্যাংরা ৭০০ থেকে ৭৫০ ও চিংড়ি ৭০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি হয়। চাষ করা কই মাছ ছিল প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা।
দেড় কেজি ওজনের রুই মাছ কেজি বিক্রি হয় ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। আর আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের রুইয়ের দাম ছিল প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা পর্যন্ত।