জামিনে এসেই ফের বেপরোয়া হয়ে ওঠা ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসাইন ওরফে বুড়ির নাতি সাজ্জাদ খুঁজছে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ। চট্টগ্রামের চান্দগাঁও, বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানা এলাকায় অস্ত্রবাজি, মারামারি, হত্যাচেষ্টা, চুরি ও প্রতারণাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাণ্ডের জন্য বেশ কয়েক দফায় গ্রেফতারের পর বেশ কিছুদিন জেল খেটেছিলো ভাড়াটে সন্ত্রাসী সাজ্জাদ। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ফের একই কাজে জড়িয়ে পড়ায় পুলিশ তাকে খুঁজছে । সম্প্রতি নগরীর বায়েজিদ ও চান্দগাঁওয়ে চাদাবাঁজির উদ্দেশ্যে বেশ কিছু এলাকায় অস্ত্র নিয়ে মহড়া, গুলি করে ঘর ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও প্রতিবাদ করায় স্থানীয় এক যুবককে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করার ঘটনায় করা মামলায় পলাতক রয়েছে বলে জানান বায়েজিদ থানা পুলিশ। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সক্রিয় থাকলেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বারবার পার পেয়ে যায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ।
শীঘ্রই সাজ্জাদকে আইনের আওতায় আনা হবে
আব্দুল মান্নান মিয়া
অতি: কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন), সিএমপি
সর্বশেষ গত ৫ জুলাই দিবাগত রাতে বায়েজিদ থানার ভুলিয়ে পাড়া এলাকায় চাদাঁবাজিতে বাধা দেওয়ায় অস্ত্র নিয়ে এক বাড়িতে হামলা করে ঘরের জানালাসহ বেশ ক্ষয়-ক্ষতি করেছেন। ঘটনার ভুক্তভোগী ইকবাল দেশ বর্তমানকে বলেন, এলাকায় সাজ্জাদকে চাঁদাবাজি করতে বাঁধা দেওয়ায় আমার উপর ক্ষেপে আমার বাড়িতে বশে কয়েক রাউন্ড গুলি করে। আমি প্রাণে বেঁচে গেলেও আমার ঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
তিনি আরও বলেন, শুধু আমি কিংবা আমার পরিবার নয়, এরশাদ নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নেন। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজির চেষ্টার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। আমি এ সমস্ত অপকর্মের‘ বিচার চাই।
বায়েজিদের শীতল ঝর্ণা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কাদের সুজন বলেন, গেল ঈদের ৫ম দিনে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে। দীর্ঘদিন চিকিৎসা ও অপারেশন করার পরও এখনও ভালো করে দাঁড়াতে পারছেন না। ঘটনার পর মামলা করলে বেশকিছু দিন পালাতক ছিল সাজ্জাদ। তিনি প্রশাসনের কাছে এই সন্ত্রাসীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
আরেক ভুক্তভোগী তাহসিন জানান, শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের সহযোগী এই ছোট সাজ্জাদ। মূলত তার নিদের্শে এই সাজ্জাদ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি করছে। কিছুদিন আগে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করি বলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে এবং আমার উপর অনেকবার হামলার চেষ্টা করেছে। আমি এই অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীর বিচার চাই।
বায়েজিদের আরও এক ভুক্তভোগী আজিজ বলেন, আমার ভাই একসময় শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের অনুসারী ছিল। বর্তমানে জেল থেকে জামিনে আসার পর পরিবারের চাপে অপকর্ম ভুলে যখন সাধারণ জীবন যাপনে ব্যস্ত ঠিক তখনই এই ছোট সাজ্জাদকে দিয়ে বিভিন্নভাবে মেরে ফেলার হুমকি-ধামকি দিচ্ছিল।
গত ২৭ জুলাই নাশকতার অভিযোগে চান্দগাঁও থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। ওই সময় সাজ্জাদ তার এমডি সাজ্জাদ হোসেন নামের ফেসবুক আইডিতে তার ছবি দিয়ে লেখেন ‘আমার সাথে টোকাই সরোয়ার খেলতে এসে হেরে গেল, আমাকে কারাগারে ঢুকাবার চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল, এখন আমি তাকে কারাগারে ডুকিয়ে দিয়েছি এখন ভিতরে গিয়ে আমার কথা চিন্তা করিস আমি কি তারপরও যদি বুঝতে না পারস? তাহলে তোকে আরেকটা নতুন খেলা দেখাবো’ যদিও ওই লেখা অনেক বানান ভুল ছিল। এভাবে প্রতিনিয়ত হুমকি দিত আমার ভাইকে। এছাড়া আমাকেও গায়েব করার হুমকি দেন। মূলত শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের ভাতিজা মোহাম্মদ এর সহযোগিতায় কিছু স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে এমন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আমি এই সন্ত্রাসী গ্যাংয়ের বিচার চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ভুক্তভোগী বলেন, রাস্তায় চলন্ত অবস্থায় রামদা-কিরিস দিয়ে একজনের উপর হামলা করেছিলো এই সাজ্জাদ। শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের সহযোগী হাজিরপুলের হেলাল ওরফে মাছ হেলাল, আলাউদ্দিন, ওয়াজেদিয়া এলাকার আজাদ ওরফে বায়ান্নকানি আজাদ, ভুলিয়া পাড়ার তুষার ও আজিমের সহযোগিতায় প্রায় সময় চাদাঁবাজির চেষ্টা ও এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা করছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চান্দগাঁও, বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানায় অস্ত্র, মারামারি, হত্যাচেষ্টা, চুরি ও প্রতারণার প্রায় ১০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে নানা অপকর্মের অভিযোগ।
পলাতক সাজ্জাদ চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানাধীন শিকারপুর গ্রামের সোনা মিয়া সওদাগর বাড়ির মো. জামালের ছেলে।
এ বিষয়ে বায়েজিদ বোস্তামি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, সন্ত্রাসী সাজ্জাদ একজন পলাতক আসামী। কিছুদিন আগে একজনকে কুপানোর ঘটনার মামলায় সে অন্যতম আসামী। এই মামলায় তার সহযোগীদের ধরলেও সাজ্জাদ গা ঢাকা দিয়েছে। শীঘ্রই তাকে আইনের আওতায় আনবেন বলেও জানান ওসি।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে সিএমপির অতি: কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, সাজ্জাদের বিষয় আমলে নিয়ে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। কোন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম কিংবা অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড করে কেউই পার পাবে না। যেহেতু তার বিরুদ্ধে মামলা আছে সেহেতু শীঘ্রই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, গতবছরের ১৭ জুলাই সোমবার নগরীর চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট সেতুর পশ্চিম পাশের মাছ বাজার সংলগ্ন এলাকা থেকে দেশীয় তৈরি এলজি ও দুই রাউন্ড কার্তুজসহ সাজ্জাদ হোসাইন ওরফে বুড়ির নাতি সাজ্জাদকে গ্রেফতার করেছিল চান্দগাঁও থানা পুলিশ। ওই সময় পুলিশের দাবি ছিল, সাজ্জাত একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী। ওই সময় চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে। সাজ্জাদ এলাকা চাঁদাবাজি ও মারামারির সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে চান্দগাঁও, বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানায় অস্ত্র, মারামারি, হত্যাচেষ্টা, চুরি ও প্রতারণার ৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ক্রেডিট: দৈনিক দেশ বর্তমান