কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে দেশজুড়ে চালানো নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ব্যাপক তৎরতা চালাচ্ছে পুলিশ। এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় দুই হাজার ব্যক্তিকে। এখনো অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়াদের কাউকে কাউকে ছাড়াতে এরই মধ্যে তদবিরে নেমেছেন খোদ সরকারদলীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই।
অভিযোগ উঠেছে, আটকদের ছাড়াতে রাজশাহী বিভাগের কোথাও কোথাও সরকারদলীয় স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ-ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের দিয়ে তদবির করানো হচ্ছে। এতে নাশকতার সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় থানা পুলিশকে।
পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক, পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন জেলা পুলিশ সুপারের কাছে দ্বারস্থ হচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপার দ্বারস্থ হয়েছেন রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজির কাছে।
রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি আনিসুর রহমান পরিস্থিতি সামাল দিতে নাশকতাকারীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন বিভাগের থানাগুলোতে। বুধবার (২৪ জুলাই) রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি বিভাগের আট জেলার সব থানায় চিঠি দিয়ে দুই দিনের মধ্যে তদবিরকারীদের তালিকা তৈরি করে পাঠাতে বলা হয়েছে রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে।
পুলিশের ওই সূত্রটি আরো জানায়, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশজুড়ে চালানো নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে পুলিশ। এরই মধ্যে রাজশাহীতেও দুই শতাধিক গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যাদের বেশির ভাগই বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। তবে তাদের কাউকে কাউকে ছাড়াতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এমপি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ব্যাপক তদবির শুরু করেন। এতে কোনো কোনো থানার ওসি পড়েন বেকায়দায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কয়েকজন ওসি স্থানীয় পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হন। এরই মধ্যে ৬৮ জন তদবিরবাজের প্রাথমিক তালিকাও করেছেন ওসিরা।
তবে ডিআইজি অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সূত্রটি আরো জানায়, একজন পুলিশ সুপারের সঙ্গে বগুড়ার এক উপজেলা চেয়ারম্যানের এ নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়। এরপর বিষয়টি জানতে পারেন রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি আনিসুর রহমান। তিনি বিষয়টি জানার পরে গত বুধবার রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার ওসিদের চিঠি দিয়ে দুই দিনের মধ্যে তদবিরবাজদের তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দেন। তালিকা পাওয়ার পরে সেটি পুলিশ হেডকোয়ার্টারসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হবে। তালিকা অনুযায়ী তদবিরবাজদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তার নির্দেশনা চাওয়া হবে। পাশাপাশি দলীয় পর্যায় থেকেও ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি আনিসুর রহমান বলেন, ‘নাশকতাকারীদের ছাড়াতে যাঁরা তদবির করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদবিরবাজদের তালিকা তৈরির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। থানা থেকে তালিকা পাওয়ার পরেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ক্রেডিট:কালের কণ্ঠ