কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ভয়ে মহাসড়কে পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ করেন পরিবহন শ্রমিকরা। এর ওপর ছিল কারফিউ। আর ইন্টারনেটসেবা না থাকায় চট্টগ্রাম কাস্টমস শুল্কায়ন করতে পারেনি। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর ও বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতে (অফডক) থাকা আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে যায়।
ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কার্যক্রম চালানো হলেও কার্যত বন্ধ হয়ে যায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য।
বুধবার (২৪ জুলাই) থেকে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটসেবা চালু হওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের গতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, গত ১১ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আটটি বাল্ক জাহাজ ও পাঁচটি কনটেইনারবাহী জাহাজ রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে। আর ২১ ও ২২ জুলাই তিন হাজার ৪৬৯টি কনটেইনারের মাধ্যমে ৭১ হাজার ২০২ টন এবং বাল্ক জাহাজের মাধ্যমে এক লাখ আট হাজার ৫৮১ টন বিভিন্ন ধরনের বাল্ক (কয়লা, পেট্রোলিয়াম অয়েল, পামালিন অয়েল, বাল্ক সয়াবিন) আমদানি পণ্য খালাস হয়েছে।
এ সময়ে আদা, রসুন, পেঁয়াজ, মাছ, ফলমূল, সার, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল এবং যেগুলো শুল্ক-করাদি পরিশোধিত সেগুলো বন্দর থেকে ছাড়করণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রপ্তানিক্ষেত্রেও অফ ডকগুলো থেকে পণ্য চালান ছাড়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
গত ২১ ও ২২ জুলাই ৫৫টি বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে ৭৬ হাজার ৪৫৯ টন পণ্য চালান ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ৯ হাজার ৭১৪টি বিল অব এক্সপোর্টের বিপরীতে প্রায় ১১ হাজার ৮০৯ টন পণ্য চালান শুল্কায়ন করে ছাড় করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে পণ্য খালাসের জন্য তিন শিফটে স্ক্যানিং কার্যক্রম পুরোদমে চালু রয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার ইমাম গাজ্জালী বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত ম্যানুয়ালি পচনশীল পণ্য শুল্কায়ন করেছি। ২৩ জুলাই পর্যন্ত এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের মাধ্যমে বিল অব এন্ট্রি ও বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করা সম্ভব হয়েছে। একই দিন ৯৯৩টি বিল অব এন্ট্রি ও তিন হাজার ৮২৩টি বিল অব এক্সপোর্টের শুল্কায়নপ্রক্রিয়া শেষ করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। আজ (বুধবার) ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ায় সব কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকতার হোসেন বলেন, ‘আমাদের বন্দর ও কাস্টমে সমস্যা হচ্ছে না।
পণ্য খালাসে সমস্যা করছে শিপিং এজেন্ট। তাদের ডিউ না পাওয়ায় পণ্য খালাস করতে পারছি না। তবে আজ (বুধবার) অনেক ডিউ তারা দিয়েছে।’
বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার সদস্যসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘গত কয়েক দিনে নতুন কোনো কনটেইনার ডিপোতে পৌঁছাতে পারেনি। এখন ১৯টি ডিপোতে আগে আসা মোট পাঁচ হাজার রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার জমে আছে। আজ (বুধবার) ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটসেবা চালু হওয়ার পর অচলাবস্থা থেকে অনেকটা গতি ফিরেছে। আমরাও চেষ্টা করছি দ্রুত ছাড় করে রপ্তানি পণ্য জাহাজে ওঠানোর জন্য। স্বাভাবিক গতিতে শুল্কায়ন ও পণ্য আনা-নেওয়া শুরু হলে এরপর সব কিছু আবার আগের পর্যায়ে ফিরতে সপ্তাহকাল সময় লাগতে পারে।’
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর এম সোহায়েল বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে বন্দরের সব জেটিতে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামার কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু কনটেইনার ডেলিভারিতে সমস্যা হয়েছে। শনি থেকে সোমবার ডেলিভারি কম হওয়ায় কনটেইনারজট তৈরি হয়েছে। এটা আরো বাড়লে হয়তো সমস্যা হতো। কিন্তু মহাসড়কে যানবাহন চলতে শুরু করায় বুধবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারা দেশে পণ্য পরিবহনে শ্রমিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পরিবহন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময়সভায় তিনি পরিবহন শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আপনাদের কারফিউ পাস লাগবে না। যাঁদের আইডি কার্ড নেই, তাঁরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাবেন। আর কোনো সমস্যা হলে সরাসরি ০২৪১৩৬০৬০৪ ও ০১৭৩৩-৩৩৪৩০৩ নম্বরে কল দেবেন। আমরা তাত্ক্ষণিক সহযোগিতা দেব। মাঠে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন।’
পরিবহন শ্রমিকদের উদ্দেশে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আপনাদের দাবি ছিল মহাসড়কের খাবারের দোকান খোলা রাখার জন্য। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানিয়ে দেওয়া হবে। গান পাউডার দিয়ে ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান পুড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে আপনারা আগেও জেনেছেন। সবাই এ বিষয়ে সচেতন থাকবেন।’