‘কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় তাদের দাবি পরিবর্তন কেন’—এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী এই প্রশ্ন উত্থাপন করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় তাদের দাবি পরিবর্তন করা হচ্ছে। আমরা সবাই জানি, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ আছে।
নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভা। এ তিনটি অঙ্গ কিভাবে কাজ করে, সে বিষয়ে যদি ধারণা না থাকে, তখনই বিভ্রান্তি তৈরি হয়।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বারবার তারা দাবি পরিবর্তন করছে, একেকবার রাষ্ট্রের একেক অঙ্গের কাছে তারা দাবি জানাচ্ছে। এখানে মনে হচ্ছে, তাদের সম্যক ধারণার কিছুটা অভাব আছে।’
মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘প্রথমে আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল হাইকোর্ট বিভাগের আদেশে সরকারের জারি করা যে পরিপত্র বাতিল করা হয়েছিল তা পুনর্বহাল করতে হবে। এটি পুনর্বহাল করার ক্ষমতা শুধু বিচার বিভাগেরই আছে। কাজেই ধরে নেওয়া যায়, বিচার বিভাগ, অর্থাত্ হাইকোর্ট ২০১৮ সালে সরকার যে পরিপত্রটি বাতিল করেছিল, সেটি তারা হাইকোর্টের কাছে দাবি জানিয়েছিল পুনর্বহাল করার। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ রাস্তায় আন্দোলন করে পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই।
এটি পরিবর্তনের একমাত্র উপায় হলো সর্বোচ্চ আদালতে যেতে হবে।’
আইনি প্রক্রিয়ায় থাকা বিষয়ে সংস্কারের ঘোষণা দেওয়ার সুযোগ নেই
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যখন সরকার হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে সর্বোচ্চ আদালতে আইনি প্রক্রিয়ায় ঢুকে গেছে সে অবস্থায় কোটাব্যবস্থার সংস্কার করা বা সংস্কার করার ঘোষণা দেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটা অসাংবিধানিক হবে। কিন্তু তারা (আন্দোলনকারীরা) সেই অসাংবিধানিক দাবি করা শুরু করল। এর মধ্যে সরকারপক্ষের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট থেকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বা ‘স্ট্যাটাস কো’ নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন।
সর্বোচ্চ আদালত ‘সাবজেক্ট ম্যাটারের’ ওপর চার সপ্তাহের জন্য ‘স্ট্যাটাস কো’ আদেশ দিয়েছেন এবং যার ফলে কোটা বিষয়ে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র আবার পুনর্বহাল হলো।”
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে এও বলা হয়েছে যে হাইকোর্টের আদেশ অপারেশনে থাকল না অর্থাত্ সরকারের পরিপত্র পুনর্বহাল হয়ে গেল। আন্দোলনকারীদের সেই দাবি চার সপ্তাহের জন্য পূরণ হয়ে গেল, যেটা তাদের প্রাথমিক দাবি ছিল। সর্বোচ্চ আদালতও আন্দোলনকারীদের আহ্বান জানিয়ে বলছেন যে তাদের বক্তব্য পেশ করার জন্য আদালতের দরজা সব সময় খোলা।’
কোটার সিদ্ধান্ত সংসদের বিষয় নয়
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা বিষয়ে মূলত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ থেকে, আদালত কিংবা সংসদের বিষয় নয় এটি। সর্বশেষ যখন হাইকোর্ট বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের আংশিক প্রকাশিত হলো, সে রায়ে হাইকোর্ট সরকার তথা নির্বাহী বিভাগকে কোটা সংস্কারের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। তখন তাদের দাবি আবার পরিবর্তন হয়ে গেল। এখন তারা দাবি করছে সংসদ বা আইনসভাকে আইন করতে হবে।’
মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘প্রথমে আদালতের কাছে দাবি, তারপর নির্বাহী বিভাগের কাছে দাবি, তারপর এখন সংসদের কাছে দাবি। সরকারপক্ষের আইনজীবীরা সর্বোচ্চ আদালতে তাঁদের যুক্তি উপস্থাপনেও এ বিষয়টি এনেছেন এবং আরো জোরালোভাবে আনবেন যে কোটা বিষয়ে নীতি বা পলিসি সিদ্ধান্ত নির্বাহী বিভাগেরই কাজ, এটি আদালতের নয়। কাজেই সংসদে এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের দাবি একেবারেই অজ্ঞতাপ্রসূত।’
স্লোগানেও বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একটি স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, মেধা না কোটা, কোটা না মেধা, মেধা, মেধা। স্লোগানটি খুবই যৌক্তিক। আমি এ স্লোগানের পক্ষে। অবশ্যই মেধা। কিন্তু এই স্লোগানের মাধ্যমে যে বক্তব্য হাজির করা হচ্ছে সেখানে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে। কোটায় নিয়োগের ক্ষেত্রেও মেধাবীদের বিবেচনা করা হচ্ছে। একটা পর্যায় পর্যন্ত মেধার মাধ্যমে বাছাই করা হচ্ছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোটার উদ্দেশ্য পিছিয়ে পড়া, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বৈষম্য নিরসন। সরকার বৈষম্যের নিরসন করে মেধার মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করছে। ক্রেডিট : কালের কণ্ঠ