বিএনপির সাবেক নেতা প্রয়াত নাজমুল হুদা প্রতিষ্ঠিত ‘তৃণমূল বিএনপি’তে যোগ দিচ্ছেন বিএনপির সাবেক দুই নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত এই দুই নেতা দলটির শীর্ষ দুই পদে আসছেন। তাঁরা ছাড়াও বিএনপির সাবেক, বহিষ্কৃত ও নিষ্ক্রিয় একঝাঁক নেতাও আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, আগামী মঙ্গলবার তৃণমূল বিএনপির প্রথম কাউন্সিল।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠেয় এই কাউন্সিল উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অন্তরা হুদা সাংবাদিকদের বলেন, দলের গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যানের পাশাপাশি কো-চেয়ারম্যানের পদও থাকছে। শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার দলে যোগ দিচ্ছেন। তাঁরা ভালো পদে থাকবেন বলে আশা করি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি ভাঙার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। আর যাঁরা যোগ দেবেন, তাঁরা বিএনপির কোনো পদে তো নেই। কাউন্সিলে আরো চমক আছে। আরো অনেকে যোগ দেবেন।
আমরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি দলের রয়েছে।
অন্তরা হুদা আরো বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নিলেই আমরা সরকারের দালাল হয়ে গেছি, এটা তো ঠিক না। তবে আমরা কোনো জোটে যাব কি না, সেটি এখনো ঠিক করিনি।’
জানতে চাইলে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘বিএনপি আমাকে গত দেড় বছর ধরে বহিষ্কার করে রেখেছে।
আমি তো আর দল ছাড়িনি। একজন বহিষ্কৃত লোক কত বছর একটা পতাকা টেনে নিতে পারে? এখন আমার পরিচয় কী? মারা গেলে আমার পরিচয় কী হবে? কোন ব্যানারে আমি বক্তব্য দেব? আমার জন্ম তো রাজপথে। যেহেতু বিএনপি আমাকে বহিষ্কার করেছে, সেহেতু আমাকে এখন তৃণমূল বিএনপিকে আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে। আমি সেখানেই যাচ্ছি। আশা করি শীর্ষ পদেই থাকব।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির মতো একটা বড় দল কেউ ভাঙতে পারে? এমন চিন্তাও আমার নেই।
শমসের মবিন চৌধুরীর বক্তব্য জানতে তাঁর সঙ্গে গত রাতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূল বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানান, দলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাঁরাও ঠিকভাবে জানেন না। একটি রাজনৈতিক মহলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় সব কিছু হচ্ছে। বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তারও তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন থেকে এক প্রজ্ঞাপনে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেওয়ার কথা জানানো হয়। দলটির নির্বাচনী প্রতীক ‘সোনালী আঁশ’। নাজমুল হুদার মৃত্যুর পর দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন তাঁর মেয়ে অন্তরা হুদা।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় পররাষ্ট্রসচিব ছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করেছেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর ২০০৮ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসেন ২০০৯ সালে। বিএনপির হয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব পালন করতেন তিনি। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। তখন তিনি রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন। তবে এর তিন বছর পর ২০১৮ সালে তিনি বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দিয়েছিলেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের মাত্র সাড়ে তিন মাস আগে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে যাচ্ছেন তিনি।
অন্যদিকে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদও পেয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি ছিলেন বিএনপির প্রার্থী। শেষ মুহূর্তে দলের সিদ্ধান্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে দেশব্যাপী তখন আলোচনায় এসেছিলেন। বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন তৈমূর আলম খন্দকার। তাঁর এই সিদ্ধান্তের কারণে গত বছরের জানুয়ারিতে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।