রাজশাহী প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের জুনিয়র সেকশন অফিসার আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটুর পাঁচ বছর অফিস না করেও বেতন ভাতা উত্তোলনের ঘটনায় টনক নড়েছে কর্তৃপক্ষের। এই পাঁচ বছর ওয়াহেদ খান টিটু রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হিসেবে নগর ভবনে কাজ করেছেন। এখনো তিনি মেয়রের রাজনৈতিক দপ্তরে কর্মরত আছেন।
জানা গেছে, ওয়াহেদ খান টিটুর বিষয়টি রুয়েট সিন্ডিকেটে তোলা হবে। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর রুয়েট সিন্ডিকেটের সভা অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। সেখানেই টিটু সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার অধ্যাপক আরিফ আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটুকে শোকজ করা হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো জবাব আসেনি বলে জানা গেছে। টিটুর বিষয়টি সিন্ডিকেটে তোলা হবে, সিন্ডিকেটে আলোচনার পর তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। টিটু গত পাঁচ বছরে একদিনও অফিস করেননি।
এদিকে টিটুর মতো আরও কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে; যারা ২০১৭ সালে রুয়েটের বিভিন্ন পদে চাকরি লাভ করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন তারা নিজ নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। বর্তমানে তারা কে কোথায় কাজ করেন তাও জানেন না কর্তৃপক্ষ। এমন ফাঁকিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা আটজন বলে রুয়েট সূত্রে জানা গেছে।
তবে দীর্ঘদিন রুয়েটে ভিসি না থাকার সুযোগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই কর্মস্থলে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। এসব অনিয়মিত কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও তালিকা করছে কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষ তাদের বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এই আটজনের মধ্যে তিনজনকে ইতোমধ্যে শোকজ করা হয়েছে। বাকি পাঁচজনকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, অনুপস্থিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ডাটা প্রসেসর ও রাজশাহী মহানগরীর ২৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন শুভ, এমএলএসএস এনামুল হক ও মন্টু মিয়াকে শোকজ নোটিশ দিয়েছে। গরহাজির আরও পাঁচ কর্মকর্তা কর্মচারীকে নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রুয়েট কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে গত ৯ সেপ্টেম্বর রুয়েট কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ জারি করেছে; যাতে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে বলা হয়েছে- রুয়েট কর্তৃপক্ষ কারো রাজনৈতিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করতে চায় না। তবে কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী তার রাজনৈতিক মতামত রুয়েটে প্রচার করতে পারবেন না। একই সঙ্গে তিনি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত করতে পারবেন না। কেউ তেমনটা করলে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, রুয়েটের কর্মকর্তা কর্মচারীদের একটা বড় অংশই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনে পদ-পদবী গ্রহণ ও বহন করেন। আর এ কারণে তাদের একটা অংশ প্রায়ই কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না। আলোচিত জুনিয়র সেকশন অফিসার আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটু রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক পদে আছেন ২০১৩ সাল থেকে। রাজনৈতিক পরিচয়ে মূলত তিনি রুয়েটে সেকশন অফিসার পদে চাকরি পেয়েছেন বলে বহুল জনশ্রুতি রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর চাকরি রুয়েটে কাজ করেন রাসিকে‘ পাঁচ বছরে একদিনও অফিস করেননি পিএ টিটু’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর রুয়েট কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপস্থিতির বিষয়ে নজরদারি শুরু করেছে।