পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) এক বাসের চালককে হেনস্তার প্রতিবাদে শহরের আবদুল হামিদ রোড অবরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় দোকানদারের বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের মুখে পাবনা শহরে তীব্র যানজট তৈরি হয়।
শিক্ষার্থীদের দাবি, গতকাল (সোমবার) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের নিয়ে একটি বাস পাবনা শহরের পান্তুয়া সুইটসের সামনে এলে চালকের সঙ্গে এক অটো ড্রাইভারের তর্ক-বিতর্ক হয়। স্থানীয় এক নেতা সমস্যাটি সমাধান করে দেন। কিন্তু ওই সময় পান্তুয়া সুইটসের ম্যানেজার নাসির উদ্দিন জ্যাকি বাসে উঠে বাসের চাবি কেড়ে নেন এবং চালক আবুল কালামকে গালিগালাজ করেন। এসময় কয়েকজন মানুষ উত্তেজিত হয়ে বাসচালকে গায়ে হাত তোলেন।
এ বিষয়টা প্রশাসনকে জানোর পরেও তারা বিষয়টি সমাধান করেনি।
এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য তারা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। বিক্ষোভের সময় রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী শরীয়ত উল্লাহ বলেন, পাবনা শহরে বিভিন্ন সময়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বাস ড্রাইভারদেরকে হেনস্থা করা হয়। কিছু মানুষ শিক্ষার্থীদের ন্যুনতম সম্মান দেন না।
গতকাল বাসের চাবি কেড়ে নিয়ে অপমান করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই এবং আগামীতে এ ধরনের কোনো ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় আমার প্রশাসনের কাছে সেই দাবি জানাই।
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সুরুজ মিয়া আপেল বলেন, গতকালকে যে ঘটনা ঘটেছে তার একটা সমাধানও হয়েছে। কিন্তু হঠ্যাৎ করে পান্তুয়া সুইটসের ম্যানেজার এসে বাসের চাবি নিয়ে যান এবং বাস ড্রাইভারকে গালিগালাজ করেন। এটা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য লজ্জাজনক বিষয়।
কোন কারণে ওই ম্যানেজার এই কাজ করেছেন আমরা সেটার জবাব চাই। এর জন্য ম্যানেজারকে ক্ষমা চাইতে হবে না হলে আমরা রাস্তা ছাড়বো না।
এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে পাবনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম, পাবনা সদর থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামাল হোসেন, সহকারী প্রক্টর ড. মাসুদ রানা, ইয়াহিয়া ব্যাপারী আকাশ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান সবুজ ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন।
পরে দুপুর ১টার দিকে শিক্ষার্থীদের চাপে পান্তুয়া সুইটসের ম্যানেজার নাসির উদ্দিন জ্যাকি শিক্ষার্থীদের সামনে বাস ড্রাইভারের কাছে ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের আচরণ করবেন না বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দেন। পরে শিক্ষার্থীরা অবরোধ উঠিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যান।
এ বিষয়ে কথা জানতে চাইলে পান্তুয়া সুইটসের ম্যানেজার নাসির উদ্দিন জ্যাকি গণমাধ্যমের সামনে কিছু বলতে রাজি হননি। পান্তুয়া সুইটসের মালিক মাহমুদুন্নবী বলেন, আমি গতকাল দোকানে ছিলাম না। যদি আমার ম্যানেজার এই ধরনের কোনো কাজে জড়িত থাকে তাহলে তাকে দোকান থেকে বহিষ্কার করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, গতকাল ঘটনা ঘটার পর আমার দোকানদার এবং বাস ড্রাইভারদের সাথে কথা বলেছি এবং সেখানে একটা সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আজকে হঠাৎ করে শিক্ষার্থীরা শহরে এসে রাস্তা অবরোধ করেন। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমরা জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলে আগামীতে ধরনের কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে আমরা সে চেষ্টা করব।
পাবনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, ছোট একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে, যেটা একেবারেই কাম্য ছিল না। শহরের রাস্তাগুলোর প্রশস্ততা কম হওয়াতে বেশিরভাগ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের কারণে শহরে জ্যাম তৈরি হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ড্রাইভারদের সাথে অটো, রিকশা ড্রাইভারদের সাথে সমস্যা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িগুলো বিকল্প কোনো রাস্তা দিয়ে নিতে পারলে সমস্যাটা তৈরি হতো না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলব এবং যদি বিশ্ববিদ্যালয় বাসগুলো বিকল্প কোনো রাস্তা দিয়ে নেওয়া যায় কিনা সেটা দেখবো। বিকল্প রাস্তা দিয়ে বাস নিতে পারলে এই সমস্যা গুলো তৈরি হবে না বলে আমি মনে করি।