উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন চলতি মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে রাশিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। একজন মার্কিন কর্মকর্তা বিবিসির মার্কিন সহযোগী সিবিএসকে এমন তথ্য জানিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা আরো বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার ইউক্রেনের যুদ্ধকে সমর্থন করে। এই যুদ্ধে মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহ করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করবেন দুই নেতা।
তবে পরিকল্পিত বৈঠক কোথায় হবে তা স্পষ্ট নয় এবং উত্তর কোরিয়া বা রাশিয়া এবং অন্যান্য মার্কিন মিডিয়াও এই প্রতিবেদনে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
হোয়াইট হাউস দুটি দেশের মধ্যে অস্ত্র সমঝোতা নিয়ে নতুন তথ্য পাওয়ার কথা বলেছিল তখনই সম্ভাব্য এই বৈঠকের কথা সামনে আসলো। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই সাম্প্রতি উত্তর কোরিয়া সফরের সময় পিয়ংইয়ংকে রাশিয়ার কাছে আর্টিলারি গোলাবারুদ বিক্রি করতে রাজি করার চেষ্টা করেছিলেন। ওই বৈঠকে এ প্রদর্শিত অস্ত্রের মধ্যে হাওয়াসং আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল।
কোভিড মহামারীর পর এই প্রথম কিম বিদেশী অতিথিদের জন্য দেশের দরজা খুলে দিয়েছিলেন।
কিরবি আরো বলেন, ‘পুতিন এবং কিম এরপর থেকে তাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে চিঠি বিনিময় করেছেন। আমরা উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে অস্ত্র আলোচনা বন্ধ করার এবং পিয়ংইয়ং রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ বা বিক্রি না করার জন্য জনসাধারণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা মেনে চলার আহ্বান জানাই।’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করলে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ নানা ব্যবস্থা নেবে।
এই ধরনের চুক্তির বিনিময়ে উত্তর কোরিয়া কী পাবে তা নিয়ে ওয়াশিংটন এবং সিউল উভয়েরই বেশ উদ্বেগ রয়েছে। এতে এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেতে পারে। সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, শোইগু রাশিয়া, চীন এবং উত্তর কোরিয়াকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের মতো যৌথ নৌ মহড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আরেকটি ভয়, রাশিয়া ভবিষ্যতে উত্তর কোরিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে, এমন সময়ে যখন পিয়ংইয়ংয়ের তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আরো উদ্বেগজনক বিষয় হল, কিম পুতিনকে তার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে অগ্রগতি করতে সহায়তা করার জন্য উন্নত অস্ত্র প্রযুক্তি সরবরাহ করতে পারেন।
তবে এই চুক্তি কৌশলগত হওয়ার চেয়ে বেশি লেনদেনের হতে পারে। সেই সন্দেহ আপাতত উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ আপাতত রাশিয়ার অস্ত্র দরকার আর উত্তর কোরিয়ার অর্থ ও খাবার।
সংবাদ সংস্থা নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, কিম এবং পুতিনের মধ্যে বৈঠকটি রাশিয়ার পূর্ব উপকূলের বন্দর শহর ভ্লাদিভোস্টকে হতে পারে। সংবাদপত্রটির কূটনৈতিক সংবাদদাতা এডওয়ার্ড ওং বিবিসিকে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের একটি দল গত মাসের শেষের দিকে ভ্লাদিভোস্টক এবং মস্কো ভ্রমণ করেছে। এদের মধ্যে নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও ছিলেন, যারা দুই নেতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন। তিনি আরো যোগ করে বলেন, উত্তর কোরিয়া তার স্যাটেলাইট এবং পারমাণবিক চালিত সাবমেরিনের জন্য মস্কোর কাছ থেকে উন্নত প্রযুক্তি চাইছে। এছাড়াও উত্তর কোরিয়া বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি তাই রাশিয়ার কাছ থেকে ত খাদ্য সহায়তাও চাইছে। পিয়ংইয়ং এবং মস্কো উভয়ই এর আগে অস্বীকার করেছে, উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে ইউক্রেনের যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র সরবরাহ করবে।
২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ায় যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন জন এভারার্ড। তিনি বিবিসিকে বলেন, “সম্ভাব্য সফরের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের কারণে এখন এই সফরের সম্ভাবনা নেই। কিম জং উন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিকারগ্রস্ত। তিনি তার গতিবিধি গোপন রাখতে চেষ্টা করেন এবং যদি সবাই জানতে পারেন যে, তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে ভ্লাদিভোস্টকে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তবে তিনি সম্ভবত পুরো বিষয়টি বাতিল করবেন।” পিয়ংইয়ং জানে মস্কো যুদ্ধাস্ত্রের জন্য মরিয়া এবং উত্তর কোরিয়া অস্ত্রের জন্য যে মূল্য চাইবে তা ‘চোখের জলের মতো উচ্চ মূল্য’ হবে। উত্তর কোরিয়ার কাছে অস্ত্রের মজুদ থাকলেও তাদের অবস্থা খুবই খারাপ বলে তিনি জানান।
কিম ও পুতিন এই দুই নেতা সর্বশেষ দেখা করেছিলেন ২০১৯ সালের এপ্রিলে। তখন কিম ট্রেনে করে ভ্লাদিভোস্টকে পৌঁছেছিলেন। কিম সম্ভবত তখন শেষবারের মতো বিদেশ ভ্রমণ করেছিলেন।
সূত্র: বিবিসি