জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যুগ্ম কমিশনার মাসুমা খাতুনকে অপহরণের পেছনে তার সাবেক স্বামী হারুন অর রশিদের যোগসাজশ রয়েছে। বিপুল পরিমান অর্থ ও উন্নত জীবনের প্রলোভনে ওই কমিশনারের সাবেক গাড়িচালক মাসুদ অপহরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে।
আজ (শনিবার) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাতে মাসুদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যুগ্ম কমিশনার মাসুমা খাতুনকে অপহরণ করে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তার সাবেক স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হারুন অর রশিদ ওই যুগ্ম কমিশনারের সাবেক গাড়িচালককে বিপুল অর্থ ও উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার মাসুদ ভুক্তভোগী যুগ্ম কমিশনার মাসুমা খাতুনের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ছিলেন। গত ১ আগস্ট ব্যক্তিগত শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে মাসুমা খাতুন তাকে অব্যাহতি দেন।
ফলে মাসুদের মধ্যে ভুক্তভোগীর প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রশ তৈরি হয়।
গ্রেপ্তার মাসুদ জানায়, চাকরি থেকে অব্যাহতির পর ভুক্তভোগী নারীর প্রথম স্বামী হারুন অর রশিদ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। এ সময় ভ্ক্তুভোগী নারীকে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যেতে বলা হয়। এ কাজের জন্য মাসুদকে হারুন অর রশিধ বিপুল পরিমান অর্থ ও উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখায় এবং অগ্রিম ৭০ হাজার টাকা প্রদান করে।
এরপর গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় মাসুদ তার সহযোগী হাফিজ, পনু, রাজু, সাব্বির, সাইফুল ও শান্তকে পরিকল্পনার কথা জানায় এবং সবাইকে প্রদত্ত টাকা বণ্টন করে দেয়। তাদের মধ্যে ভুক্তভোগীর বর্তমান গাড়িচালকের সঙ্গে হাফিজের সুসম্পর্ক রয়েছে। হাফিজ তার থেকে ভুক্তভোগীর অবস্থান জেনে মাসুদকে জানায়। তারা রাজধানীর বেইলী রোড এলাকা থেকে ভুক্তভোগীকে অপহরণের সিদ্ধান্ত নেয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৭ আগস্ট রাত ৮টার দিকে তারা রাজধানীর বেইলী রোড এলাকায় অবস্থান নেয়।
ভুক্তভোগী নারী রাত ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর মগবাজার থেকে নিজ গাড়ি করে বেইলী রোড এলাকায় পৌঁছলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিক্সা দিয়ে ভুক্তভোগীর গাড়ির গতিরোধ করে।
এসময় ভুক্তভোগীর গাড়িচালক মোটরসাইকেল ও রিক্সা সড়ানোর জন্য নামলে তাকে মারধর করা হয়। এরপর গ্রেপ্তার মাসুদ চালকের সিটে বসে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এসময় গ্রেপ্তার পনুসহ অন্যান্য সহযোগীরা গাড়িতে উঠে বসে ভুক্তভোগীকে জোড়পূর্বক অপহরণ করে হাতিরঝিলের উদ্দেশ্যে গমন করে। অপহরণের বিষয়টি ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামীকে জানালে তিনি তাদের হাতিরঝিলে একটি বাসার ঠিকানায় নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু সেখানে গিয়ে ওই বাসার মেইন গেইট বন্ধ থাকায় ভুক্তভোগীকে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে করে ঘুরে সময়ক্ষেপন করতে থাকে।
এরপর আনুমানিক রাত ১২টার দিকে কাঁচপুর এলাকায় গ্রেপ্তার মাসুদের পরিচিত একটি গ্যারেজে ভুক্তভোগীকে নেওয়া হয়। সেখানে নিয়ে গিয়ে ভুক্তভোগীকে নির্যাতন করে প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং তার কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ ছাড়াও তার কাছে থাকা নগদ দেড় লাখ টাকা ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয় বলে ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন।
এরপর গত ১৮ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে ভুক্তভোগীকে নিয়ে তারা রাজধানীর মাদারটেক এলাকায় গমন করে এবং জুমার নামাজ পর্যন্ত অবস্থান করে। এ সময় গ্রেপ্তারকৃত মাসুদ ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তাদের জুমার নামাজের পর সেখানে নিয়ে যেতে বলেন। দুপুরে খাবার সময় হলে মাসুদ, রাজু ও সাব্বির খাবার আনতে যায় এবং পনু, সাইফুল ও শান্ত গাড়ির বাইরে পাহাড়ায় থাকে।
এসময় সুযোগ বুঝে ভুক্তভোগী বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে এবং সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে আটক করে। এদিকে গ্রেপ্তার মাসুদ, পনু ও শান্ত কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ এসে ভুক্তভোগীকে হেফাজতে নেয় এবং সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে গ্রেপ্তার করে তাদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীর ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।
মাসুদ বিগত ২৫ বছর ধরে একজন গাড়িচালকের পেশায় রয়েছে। এর আগে সে বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন ভারী যানবাহন চালিয়েছে। পরবর্তীতে একটি বাস দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় মামলা হলে তার ভারীযান চালানোর লাইসেন্সটি বাতিল হয়। এছাড়াও সে গাড়ি চুরিসহ এলাকায় বিভিন্ন ধরণের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। ওই ঘটনার পর সে রাজধানীর বাবু বাজার এলাকায় তার এক বন্ধুর বাসায় এবং গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় তার এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপনে ছিল। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।